ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ ভূখণ্ডের মুক্তির দূত

হারিসুল হক

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

এ ভূখণ্ডের মুক্তির দূত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জননেত্রী শেখ হাসিনা

পৃথিবীতে এন্তার জাতি-গোষ্ঠী বিদ্যমান। তাদের সকলের না আছে উল্লেখ করার মতো কোন ইতিহাস না আছে তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এমন কোন আইকনিক ব্যক্তিত্ব। উদাহরণ হিসেবে আমরা আমাদের পাশের দেশ ভারতের কথা বলতে পারি। মহাত্মা গান্ধী ভারতীয়দের আইকনিক ব্যক্তিত্ব। আর হাজার বছরের পুঞ্জীভূত ঘটনার সমাহারে স্ফীত ভারতের ইতিহাস। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলার কথা কে না জানে? ঠিক এমনি ধারার বিশ্লেষণে বাঙালী জাতিসত্তার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তাঁর নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের ইতিহাসও পৃথিবীর তাবৎ মানুষের অজানা থাকার কথা নয়।

পৃথিবীর সকল মানুষ জানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তর্জনী কতটা শক্তিশালী। ধন্য বাঙালী-যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতা পেয়েছে যার অমিত বিক্রমে অর্জিত হয়েছে মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকা- যা কি না প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আবারও শোষণের জাঁতাকলে পিষ্ট করার ঘৃণ্য প্রয়াস, যা ছিল বাঙালি জাতিকে পুনর্বার নিঃসীম অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়ার নোংরা প্রচেষ্টার সূচনা পর্ব মাত্র।

দ্রাবিড় কুলোদ্ভব বাঙালীর প্রতি বিধাতা সহায়-তা না হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা সে সময় বাংলাদেশে অবস্থান না করে ইউরোপে থাকবেন কেন! এখানটাতেই ষড়যন্ত্রকারীরা অঙ্কে ভুল করে ফেলেছিল। ওরা ভেবেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করলেই তাঁর আদর্শের মৃত্যু ঘটবে। ওরা ভাবতেও পারেনি জাতির পিতার দৈহিক অনুপস্থিতি জীবিত মুজিবের চেয়ে সহস্রাগুণে বিম্বিত হয়ে উঠবে।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর কী ঘটেছিল এ বাংলাদেশে। ষড়যন্ত্রকারীরা গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দর্শনের বৈভবে রচিত সংবিধানটির ভিত্তিমূলে কুঠারাঘাত করল। ওরা মানবতার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে ইনডেমনিটি আইন পাস  করল যে কালো আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যার নায়কেরা বিচারের বাইরে চলে গেল। কার্যত স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে ওরা হীন খেলায় মেতে উঠল।

ওরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মতো জঘন্য অপরাধেও লিপ্ত হয়ে পড়ল, ওরা পাকবাহিনী না লিখে লিখতে শুরু করল হানাদার বাহিনী, দিবালোকের মতো স্পষ্ট সেই স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটাল। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি তাদেরকে বসানো হল মহান জাতীয় সংসদে, প্রত্যক্ষভাবে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল তাদের মস্তকে শোভা পেল মন্ত্রিত্বের মুকুট।
বাংলাদেশের এমনই অন্ধকার সময়ে বাঙালীর ত্রাতা জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসা। সে দিনটি ছিল ১৭ মে ১৯৮১। সেদিন ঢাকায় বৃষ্টি ছিল। বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে লাখো জনতা উদ্বেল অপেক্ষায় কখন দেশের মাটিতে পা রাখবেন শেখ হাসিনা। সেদিন শেখ হাসিনা বাঙালীকে বরাভয় দিয়ে বলেছিলেন, আমি আপনাদের জন্য আমরণ কাজ করে যেতে চাই। আমার চাওয়ার কিছু নেই। আমার পিতা মাতা ভাই হারিয়ে আমি এখন রিক্ত। তাঁর এ বক্তব্যে বাংলাদেশের জনগণ সেদিন স্বস্তি ফিরে পেয়েছিল।
আর অপরদিকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ষড়যন্ত্রকারীদের পিলে চমকে দিয়েছিল। মরিয়া হয়ে উঠল তারা। শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সভা-সমিতিতে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে লাগল, বারবার শেখ হাসিনার জীবননাশের চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল, ওরা রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার অপচেষ্টা পর্যন্ত চালিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা, যাঁর ধমনীতে বাংলার শার্দুল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত বহমান দুনিয়ার কোন রক্তচক্ষু কী তাঁকে থামাতে পারে! অমিত তেজে শেখ হাসিনা সামনে এগিয়ে গেছেন জীবনের পরোয়া না করে। তিনি বরাবরই তাঁর কর্মপথে হিমালয়ের মতো অটল থেকেছেন-যার ফলশ্রুতিতে আজকের এ উন্নত বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্প শাসনামলে বাঙালী জাতিকে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সংবিধান আর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হাতে তুলে দিলেন। বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটি যদি আজও কেউ মনোযোগ দিয়ে পড়েন তবে তার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা কতটা গভীর, তিনি কতনা ভালবাসতেন এ দেশ আর এ দেশের মানুষকে। এ গ্রন্থনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে আছে তাঁর স্বপ্ন শতদল। অন্ধকারের প্রাণীরা  বাঙালীর এ অবিসংবাদিত নেতাকে নৃশংস হত্যার মাধ্যমে প্রাথমিক বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হলো আর বাঙালী পিছিয়ে গেল বর্ষপঞ্জির হিসাবে ২১ বছর।
শেখ হাসিনা দারিদ্র্যপীড়িত, শিক্ষার আলোক বিবর্জিত, ভগ্নদেহী  এ জাতির ভাগ্যোন্নয়নে উন্নয়ন সূচকের সবকটি ধাপকেই স্পর্শ করতে চাইলেন। তিনি বাংলার আনাচে-কানাচে গড়ে তুললেন কমিউনিটি ক্লিনিক, এতে করে জাতীয় স্বাস্থ্য নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এল বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। শিক্ষা বিস্তারের জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসবের মতো মহতী প্রচেষ্টা সমগ্র বিশে^ বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।
গোটা দেশে নারীশিক্ষার অভাবনীয় প্রসার অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশে^ অনেকখানি এগিয়ে গেছে আর এটি সম্ভব হয়েছে কেবল জননেত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণে। এবং এ কারণেই জাতিসংঘ চলতি বছরে বিশে^র দ্বিতীয় সফল প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় তাঁকে বিভূষিত করেছে। আমরা যদি বাংলাদেশের বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে পাকা সড়ক নির্মিত হয়নি।

চিরকালের অবহেলিত ভাটি অঞ্চল এখন হয়ে উঠেছে বিনোদনের হটস্পট। শহরের মানুষ এখন নৌকায় করে হাওড় দেখতে যায়, বজরায় রাত কাটায় আর মুর্শিদী গান শোনে। পদ্মা সেতু খুলে দেবার পর দক্ষিণ বাংলার জনগণ রাজধানীতে কাজ শেষ করে দিনে দিনে ঘরে ফিরতে পারে, নতুন প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে কুয়াকাটা আর সুন্দরবন এলাকাজুড়ে। মেট্রোরেল আর কর্ণফুলী টানেলের মতো আধুনিক এবং নান্দনিক স্থাপনা শেখ হাসিনার উৎকর্ষ চিন্তার বহির্প্রকাশ বৈ তো কিছুই নয়।
আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১১ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে  ঠাঁই দিয়েছেন আর অন্যদিকে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তাইতো তিনি অমৃতস্য পুত্রী।

×