ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরচুলা শিল্পে নারীর ভাগ্য

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০১:০৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

পরচুলা শিল্পে  নারীর ভাগ্য

.

চীন, জাপান, ভারত, দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে পরচুলার (চুলের ক্যাপ) ব্যাপক চাহিদা বেড়েছেএসব দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে চুলের ক্যাপের বাজারলাভজনক হওয়ায় নারী উদ্যোক্তারা ঝুঁকছেন পরচুলা তৈরির দিকেএরই ধারাবাহিকতায় উত্তরের নীলফামারী জেলার গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে  পরচুলা তৈরির কারখানামান স¤পন্ন কাজ, পাদন খরচ কম এবং কম মূল্যে আমদানি করতে পারায় চীন ও জাপানসহ ১০টি দেশের ব্যবসায়ীরাফলে নীলফামারী  থেকে চুলের ক্যাপ রফতানি হচ্ছেএসব কারখানায় ৫ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেনউদ্যোক্তারা বলছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে গ্রামে গ্রামে কারখানা আরও বাড়বে পাশাপাশি এই কারখানাগুলোতে অন্তত ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হবে

সূত্র মতে প্রতি বছরে সারা বিশ্বে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পরচুলা (উইগ) রফতানি হয়ে থাকে নীলফামারীর এভারগ্রিন নামে হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেসেখানে ১৫ হাজার নারী কাজ করেকিন্তু বিশ্বে পরচুলার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই চাহিদা পূরণে নীলফামারী জেলা সদরের কচুকাটা, টুপির মোড়, গোড়গ্রাম, পলাশবাড়ি, ডোমার ও সৈয়দপুরের গ্রামে গ্রামে পরচুলা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছেএলাকার নারীরা এভারগ্রিনের মাধ্যমে সাব কন্ট্রাক নিয়ে বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়েছেগ্রাম এলাকায় এসব নারীরা বাড়ির পাশের কারখানায় কাজ করে নিজেদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলছেন

 সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর, কামারপুকুর ও নেজামের চৌপথী এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট্ট পরিসরে কয়েকটি পরচুলা তৈরির কারখানাসংসারের কাজ করেও গৃহিণীরা কারখানাগুলোতে পরচুলা তৈরি করছেনবুলবুলি বেগম (৫৫)স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেছেলের সংসারে থাকেনরয়েছে অভাব-অনটননিজের হাতখরচ জোগাতে দলবদ্ধ হয়ে তিনিও পরচুলা কারখানায় কাজ করছেনতিনি বলেন, ছেলের সংসারে খেয়ে দিন চলেনিজের অনেক প্রয়োজনীয় খরচ রয়েছেপ্রতিবেশীর বাড়িতে চুলের কাজ হচ্ছে ছয় মাস থেকেসেখানে ঢুকে কাজ করছি

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেলেপাড়া এলাকার পরচুলা কারখানায দেখা যায় সেখানেও কাজ করছে প্রচুর নারীরুমানা হক জানান এখানকার নারী শ্রমিকদের দুজন সুপারভাইজারের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ শেখানো হয়তারা ৭দিনেই সব শিখে যায়এখন এই সকল গ্রামের নারীরা সহজেই পরচুলা তৈরি করতে পারছেননারী উদ্যোক্তা রতœা জানান, এখানে চুলের ছোটক্যাপ তৈরি করলে একজন শ্রমিক পাচ্ছেন ৩শটাকা করেআর বড় ক্যাপে ১ হাজার টাকাএকজন নারী শ্রমিক দিনে গড়ে দুটি করে চুলের ক্যাপ তৈরি করতে পারেন।  এলাকার হতদরিদ্র নারীরা এতে নিজেদের আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছে

জানা যায় গ্রামের কারখানাগুলোতে কাজ করছে প্রায় ৫ হাজার নারী শ্রমিকএকেকজন  ৮ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন মাসেকাজ পেয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরাওচীনারা আমাদের এই অঞ্চল থেকে ব্যাপক পরচুলা ক্রয় করছেএটি একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হয়েছেবেসরকারীভাবে উদ্যোক্তারা পরচুলা তৈরিতে বিচ্ছিন্নভাবে ভূমিকা রাখছেপিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত নারীরা এখানে কাজ করছেএটা নিঃসন্দেহে একটি ভাল দিকতারা স্বাবলম্বী হচ্ছেকিন্তু এটাকে সরকারী নজরদারিতে এনে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার দরকার বলে মনে করেন  জেলা পরিষদের নারী সদস্য ইসরাত জাহান পল্লবী

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা বেগম বলেন, কেউ আর এখন শুধু গৃহিণী থাকতে চান নাগ্রামে ঘুরলে দেখা যাবে নারীদের ক্ষুদ্র নানা কাজে অংশগ্রহণের চিত্রনারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের ফলে অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে এই অঞ্চলেরঘুরে দাঁড়াতে পারছেন নারীরানারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তারা কর্মক্ষেত্র তৈরি করছেনএর ফলে নারীরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছেন তেমনি সংসারে সক্ষমতা বাড়ছেনীলফামারীতে গ্রামে, গ্রামে পরচুলা তৈরির ফ্যাক্টরি হওয়ায় এলাকায় একটা পরিবর্তন এসেছেএখানে কাজ করে অনেক নারী সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেনছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেননারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ততা বেড়েছেযারা কাজ করেন তারা সবাই নারীতাদের সংসারে উন্নতির পরিবর্তন এসেছেগ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বিকাশে বিসিক নানাভাবে পাশে রয়েছে এবং সহযোগিতা করছে

×