
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ এখন পূজা উৎসব মানেই থিম। ট্র্যাডিশনের সঙ্গে ট্রেন্ড মিলিয়ে নতুন কিছু করার প্রতিযোগিতা এখন পাড়ায় পাড়ায়। এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই সরস্বতী পূজাও। সাবেক প্রতিমার সঙ্গে এখন দেখা মিলে থিমের ঠাকুরেরও।
শনিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারাদেশে বিদ্যাদেবী সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে। ম-পে ম-পে পূজার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও হাতেখড়ি, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যারতিসহ নানা অনুষ্ঠান এবং সকালে ভক্তরা বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর পাদপদ্মে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেছেন। করোনা মহামারী থেকে মুক্তি আর শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরার প্রার্থনায় বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা করেছেন দেশের সনাতম ধর্মাবলম্বীরা।
তবে করোনা মহামারীর কারণে এবারই প্রথম পূজার অনুষ্ঠানের বাইরে বেশিরভাগ ম-পে ছিল না কোন আগের মতো আড়ম্বরতা। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ কারণে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সরস্বতী পূজার কোন আয়োজন ছিল না। তবে অন্যান্য মন্দির, পূজাম-প কিংবা পাড়া-মহল্লায়, ভক্তদের ঘরে ঘরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর পূজা করেছেন আড়ম্বরভাবেই।
শনিবার সকাল থেকেই প্রতিটি পূজাম-পে বাণী অর্চনায় সমবেত হন নানা সাজে সজ্জিত নারী-পুুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। আবহমান বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও এ উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায়। তবে, প্রতিটি ম-পেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অনুষ্ঠিত হয় সরস্বতী পূজা।
প্রতিবছর মাঘ মাসের শুল্কপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর আবাহন করা হয়। ঢাকা-ঢোল-কাঁসর আর শঙ্খধ্বনীতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন পূজাম-প। সরস্বতী বিদ্যার ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পূজিত হয়েছেন। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবে সরস্বতি দেবীর আরাধনা করা হয়।
রাজধানীর ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি আয়োজিত সরস্বতী পূজায় সকাল থেকেই প্রচুর পূজারী ও ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হন। এখানে সকালে প্রতীমা স্থাপন, ৯টায় পূজা অনুষ্ঠিত, ১০টায় পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, দুপুর ১২টায় প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা ৭টায় সন্ধ্যারতি অনুষ্ঠিত হয়। গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ মন্দিরেও উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেছে। সেখানেও বিপুল দর্শনার্থী বিদ্যাদেবীর কৃপা প্রার্থণা করেছেন। রমনা কালিমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রম ম-পেও পূজা ও পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়।
প্রতিবছর সরস্বতীর পূজার প্রধান আকর্ষণই থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। সেখানে ৭০-এর বেশি নানা থিমের পূজা হতো। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামতো এখানে। কিন্তু করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। তাই এবার শুধুমাত্র হলের মূল মন্দিরে একটিমাত্র পূজা অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথ হল ছাড়াও ছাত্রীদের জন্য রোকেয়া হল, শামসুন্নাহার হল, সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত-মৈত্রী হলেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে বাণী অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শেষে সেখানে সাংবাদিক সমীরণ রায়ের চার বছরের মেয়ে শ্রদ্ধা রায়কে হাতেখড়ি দেয়া হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবে সরস্বতী পূজার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল বলেন, আমরা যারা সাংবাদিকতা করি, কলম নিয়ে কাজ করি, বিদ্যার সঙ্গে আমাদের একটা প্রফেশনাল সম্পর্ক রয়েছে। সে জন্য আমরা প্রেসক্লাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা এই পূজার আয়োজন করেছি। সেখানে সনাতন সাংবাদিক পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং প্রবীণ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
কুবিতে সরস্বতী পূজা উদযাপিত ॥ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা উদযাপিত হয়েছে। শনিবার সকাল ৮টায় প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচ তলায় এ পূজা শুরু হয়। এরপর সকাল ১০টায় প্রতিমায় প্রাণদান ও মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়।
বিএসএমএমইউতে সরস্বতী পূজা
উদযাপন ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শনিবার সকালে বটতলায় বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবীকে বন্দনায় শ্রী শ্রী সরস্বতী পূজা ২০২২ উদযাপিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।