ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

-

প্রকাশিত: ০১:৩১, ৭ অক্টোবর ২০২২

কবিতা

-

যমরাজ কাহিনী


শেখ আতাউর রহমান
    
আজ আমি কবিতায় দুইশিং যমরাজ কাহিনী শোনাই
যদি অভয় দেন একটু একটু করে কল্পনার জালটা বোনাই
বহুদিন থেকে আমার পেছনে ঘুরঘুর করছেন যম চরকির মতোন
একেবারে হাতের নাগালের অতি কাছে যখন তখন
কিন্তু কোনো সুযোগ তাঁহাকে আমি দেই নাই
কারণ আমার মররার সময় যে নাই
জানেন তো যমরাজ কাটেন না আঙুলের নখ- এটা তাঁর শখ
ভয় পাই তাই ভয়ানক!
সুযোগ পেলেই চিতার থাবার মতোন ধারালো নখর বসিয়ে দেবেন ঘাড়ে
গলগল রক্ত ঝরবে তখন কেবা রক্ষা করে!
জানি আমি যেদিন মনে হবে সবকাজ হলো সাঙ্গ এবার বিদায়!
অসীম ধৈর্যে যমরাজ আছেন বসে সেদিনের অপেক্ষায়
কিন্তু আপাতত সে সুযোগ তাঁহার নাই
কারণ সে সুযোগ তাঁহাকে আমি দেই নাই
যমরাজ এতে করে ভারী বিরক্ত কেবলই আকাশের দিকে চান- কণ্ঠ তাঁর ম্লান
করেন ফরিয়াদ, মহারাজ, অনেক  তো হলো, ছুটি দিন-রয়েছে বহু কাজ!

বুঝেছেন নিশ্চয়ই এতক্ষণ
যমের অরুচি আমি এটাই কবিতার সারকথন
আমি কি তবে ত্রিকালদর্শী ‘ভূশ-ির কাক’- তাই?
এ প্রশ্নের জবাব যে দেবো তাহারো সময় নাই!!


** পৃথিবীর ভুল বানানে
ভুল শব্দগুলি

এম আমজাদ হোসেন

পৃথিবীর সমস্ত পথঘাট ভুল বানানে
ভুল শব্দে ভুল ব্যাখ্যায় ভরপুর
কোন দিকে যাব- যে দিকে যাও আমেরিকার অন্ধকার
রাশিয়ার কিছু দেখা যায় না!
ইসরাইলে এত আলো যে
আলোতে আলোতে অন্ধ হয়ে যায় দৃষ্টি
অন্ধ, রাজধানী কানা বিভাগ চোখহীন ডিস্ট্রিক্ট
রাশিয়া ইউক্রেনে গুলি ছুড়লে, অন্ধ গুলী
পথ ভুলে আমেরিকায় যায়
আমেরিকা ভুল পথে
গুলী নিয়ে হাঁটতে গিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছে
এই ভাবে ভুল শব্দ ভুল বানান
নানা দেশে বিনে কারণে পৌঁছে।
সমস্ত দেশ তার প্রদেশ-ডিস্ট্রিক্ট
তাদের প্রেমপ্রীতি ভুল পথে
ভুল রাশিয়ার সুমধুর প্রেমে না পৌঁছে বেদনায় পৌঁছে
হায় এর পরিণতি কি হবে
কে বুঝবে কার মাথার
অন্ধগলির, কানাগলির স্ক্রু বল্টু ঢিলা হয়ে
ভুল বুঝাবুঝি
শেষে যুদ্ধ ধ্বংস
কে থামাবে এই সব
সারা পৃথিবীর এই সব ভুল রাস্তার
ভুল বানান ভুল অভিধান
ভুল যুদ্ধ ভুল ধ্বংস
কে থামাবে!


** মলঙ্গির ঠিকানা খোঁজা
আতাতুর্ক কামাল পাশা

লবণের হাত ধরে হিজলীর মলঙ্গির শুরু ঠিকানা খোঁজার   
পেটের ভেতরে পেট হাতের ভেতর হাত রাজার ওপর
রাজাশন অঙ্গসংগঠনে
সমভূমে অ্যাক্রেলিকে দেখায় রিলিফ মানচিত্র
 
উদ্বোধনের ইথার মুঠোতে মুঠোতে
করোনা সনদ নিয়ে নগরের তেলাপোকা, শুয়োপোকা, জলৌকা বাতাসে
ওড়াচ্ছে বৃষ্টির মতো থোকা থোকা ফুল
সে সুবাতাস চলে যাচ্ছে ভিন দেশে ভিন কোষাগারে
 
জ্যামের পর জ্যামের, লালের পড়েতে লালবাতি
ক্ষত্রিয়কে ডেকে বলে নহে উচ্চারণ

ঝিলপাড়, রেডিশন সবাই ভীষণ  
উত্তরাধুনিকে ব্যস্ত সম্পদ বাড়াতে শেয়ালেরা
বাঘের টেবিলে বসে নৈশভোজ সেরে
আবার ফিরছে লোকালয়ে
দানছত্র খুলে বসে রঙধনুভর্তি সব খেলার বাহারে

তলার ওপর তলা চল্লিশ তলার পরে দাঁড়িয়ে সেতুটা
তার’ পরে লালন ফকির
তান ধরে জাত গেল জাত গেল বলে ...

অথচ এ দেশে একদিন
মুক্তিযোদ্ধা জন্ম নিয়েছিল


** আমার সমস্ত গন্তব্যজুড়ে

মাসুদ মুস্তাফিজ

সকল শ্রাবণজুড়ে তুমিময় বৃষ্টিÑতুমি হাসলে পৃথিবীর আলো নিভে যায়। স্বপ্নের শেকড় ছিঁড়ে দুঃসময় কাছে আসে, তোমাকে খুঁজতে জীবন পার করি ভালোবাসা আর ছায়ার বসন্ত যেন শূন্যমেঘের অরণ্য হৃদয়ময়Ñবুকের ভেতর দোলে ওঠে বাসনা দোলে ওঠে নদীরপাঠÑআমার লেখা কবিতাগুলো সুন্দরবিচ্ছেদ নির্বাচিত ঘুমের আগে মেধাবী আকাশের জানালা খোলেÑকারণ আকাশের নিচেই মৃত্তিকা ঘুমিয়ে থাকে একা। হয়তো অনেক ছায়ার প্রাণ সেখানে থাকে অনেক মৃত্তিকাঘ্রাণ আমাদের জাগিয়ে রাখে জীবন, চোখের পাঠ চুকে গ্যালে চোখ কতটা ঘুমোতে পারে!
স্মৃতির বিষাদ ভেঙে আবার তোমাকে মনে পড়ে, নিভৃতি মেঘের জলে আজ তুমিময় বৃষ্টি আজ হেমলোক সন্ধ্যা যখন বিনয় পোড়ে যখন জিবরানের দুঃভাগ্য লেখা হয় হেনরি ম্যুরের পোস্ট ইমপ্রেশনিজম আঁধার পৃথিবীর বেলার রোদ্দুরগুলো সোনার বিকেলে পড়ে থাকে এই দারিদ্র্য প্রহরে আমারÑতখন কেবল তোমারি নামে বৃষ্টি ঝড়ে আমার সমস্ত গন্তব্যে
জানিÑএকদিন প্রিয় পথ ছেড়ে প্রিয় নক্ষত্র, স্বপ্ন আর ভালোবাসা ছেড়ে নিশ্চুপ দীর্ঘ দেয়ালের গল্প হবে!
হয়তো সেই বৃষ্টির নিবিড় আঙুলে মালিন্যধোয়াÑবৃষ্টির জ্যোৎ¯œায় সৃষ্টির আগুন জ্বলে আর নেভে!  


** ব্যর্থ কবিতা
মোরশেদুল ইসলাম

কয়েক সপ্তাহ যদি খবরের কাগজে না হয়
ছাপা কোনোই কবিতা, কোনো গল্প অথবা প্রবন্ধ,
কিস্তি কিস্তি উপন্যাস, কী হবে তাতে? নিঃশ্বাস বন্ধ
হবে কি এ দেশে কারো? অথবা হবে কি কোনো ক্ষয়
পত্রিকার ব্যবসায়? সাহিত্যে উৎপাদিত যে ভয়
তাতে ঘুষখোরদের কর্ম থেমে থাকে? ছড়ায় দুর্গন্ধ
আরও; শুধু ভাগাড়টাতে বাড়ে কাক-কুকুরের দ্বন্দ্ব;
চিলেরা উপরে ঘোরে, এডিক্ট টোকাইয়েরা নির্ভয়!

কবিতায় সমাজ কি বদলায়? কিংবা কোনো সংগীতে?
বড়জোর দুটি মন চাঁদের মতন কাছে টানে,
বাঁধে প্রেমের সুতায়! কবি আজ পদের পিরীতে,
পুরষ্কার কী চেয়ার, ব্যস্ত শুধুই নিজের হিতে!
তিন অলসের মতো, যদিও দেশ পশ্চিমা বানে
ভাসে আজ তবু শিল্প দাঁড়াবে না বিন্দু বিপরীতে!


** বিভ্রান্তির জট
ইমন মাহমুদ

বহুদিন ধরে তুমি আর আগের মতো নেই
গভীর মনোযোগে আমার গল্প শোনো না,
তোমার গল্প শোনাও না
টুকটাক খোঁজখবর নাও না!
তোমার কপালজুড়ে বিরক্তির ভাজ।

আমার প্রশ্নগুলোর উত্তরে
ভেসে আসে তোমার ক্লান্তিমাখা স্বর।
আজকাল আর আগের মতো হিসাব কষি না।
সম্পর্কের টালি খাতা ছুড়ে ফেলেছি শ্মশানঘাটে।

শহরজুড়ে বিভ্রান্তির জট।
কোলাহলের ঢেউয়ে ভাসতে ভাসতে
নিজেকে হারাই,  তোমাকে হারাই;
তোমাকে খোঁজা হয় না বহুদিন।
বহুদিন নিজেরেও খোঁজা হয় না।

 তোমাকে স্মরণ করবো,
 মোনাজাতে তসবিদানায়।
 তোমার কষ্টগুলো নিয়ে যাচ্ছি,
সুখের ঢেউয়ে তুমি উচ্ছন্নে ভেসে যাও!


** ছায়াবৃত্তের আয়নাকাল

নবনিতা রুমু সিদ্দিকা

কোন পথে কাটা আমি জানি না-সুখের প্রত্যয় খুঁজি
কোন পথে হাঁটলে রক্ত ঝরবে-তাও জানি না, তবুও হাঁটি
কোন পথে ঘাসের আড়ালসমূহ-জলের সিঁড়িতে পা রেখে
অবিরাম শিখে ফ্যালি, বাতাসের নিষিদ্ধ গৌরব-শূন্যতার যাতনা
কুয়াশার সবুজ বোতামগুলো খুলে দ্যাখো জলশব্দের গ্রন্থিত স্বপ্ন আছে
তোমারি প্রতিছাচ্ছায় তোমারি নিষিদ্ধ সৌন্দর্য নর্মিত হচ্ছে
জলের সৌধে আরেক সবুজ আলোয় রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ
জানি-চাঁদে আগুন লাগে না, রাতের ছায়ায় এভাবেই মানুষও নদী হয়ে যায়
অতপর জলময়ূরীর চোখে বৃক্ষের ছায়াবৃত্তে স্থির থাকে আমাদের সুখ
বহুকাল পর আবার এসেছি নিজেকে খুঁজতে একই ছায়াবৃত্তে
আর অদৃশ্যছায়া পথে আমাদের রূপকল্প বড় হতে হতে
হঠাৎ কী যেন হারিয়ে যায়-অনাগত কালের কাছে!

×