ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

লেখক হয়ে ওঠার গল্প

ঝিনুক চৌধুরী

প্রকাশিত: ০১:৫৭, ৩ মার্চ ২০২৩

লেখক হয়ে ওঠার গল্প

ঝিনুক চৌধুরী

করোনা মহামারি তাকে ঝিনুকের খোলস থেকে বের করে এনেছে। দুই মাস গৃহবন্দি অবস্থায় প্রায় পুরো বিশ্ববাসী যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তখন তারা মুক্তি চাইছিলেন এই মৃত্যুভয় থেকে। ঘরের কাজ, স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটানোর পরও গৃহবন্দি আতঙ্কগ্রস্ত মন নিঃশ্বাস নিতে চাইছিল। সে সময় ফেসবুক গ্রুপ ‘পেন্সিল’ এর সদস্য ঝিনুক, অবসরটুকু সেখানে প্রকাশ হওয়া গল্পগুলোতে মন দিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করতেন।

এক সময় তার মনে হলো, এমন গল্প তো আমিও লিখতে পারি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পড়াশোনা করা সাহিত্যানুরাগী মায়ের মেয়ে ঝিনুক। মা লিখতেন স্থানীয় পত্রিকায়। মায়ের ইচ্ছে ছিল মেয়ে বাংলায় পড়বে। মায়ের মতো সাহিত্যানুরাগী হবে। অনেক বছর পর হলেও মায়ের সেই ইচ্ছে সত্যি হয়েছে। ঝিনুক পেন্সিলে পোস্ট হওয়া গল্পগুলো পড়ার পাশাপাশি ২০২০ এর জুলাই থেকে নিজেও লিখতে শুরু করলেন। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হতে থাকল তার গল্প, উপন্যাস।

দর্শকপ্রিয়তাও পেল। ২০২১ এর শুরুর দিকে তার একটি উপন্যাস ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আর তখনই পেন্সিল থেকে তাকে জানানো হয় এই উপন্যাসটি নিয়ে এবারের বই মেলায় তারা বই প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। ঝিনুক বলেন, ‘আমার কাছে ব্যাপারটি অভাবনীয় ছিল! পেন্সিলের আগ্রহ, পাঠকদের ভালোবাসায় সাহস করি বই প্রকাশের। আমার গল্পটি ফেব্রুয়ারির ২০/২২ তারিখ শেষ করেছিলাম। তার ৩/৪ দিন পরই প্রস্তাব আসে। এক মাসের ব্যবধানে মার্চে বই প্রকাশিত হয় ২০২১-এর বইমেলায়। সে বছর মেলা শুরু হয় মার্চে। লেখা শুরু করার আট মাস পরই প্রকাশিত হয়েছে আমার প্রথম বই ‘শুধু আমারই’- রোমান্টিক ধাঁচের উপন্যাস।’
সেই থেকে শুরু ঝিনুকের পথচলা। তার ২য় উপন্যাস ‘দিন এখনো রঙিন’ (সমকালীন), ২০২২- এর বই মেলায় প্রকাশ হয়। এবং ৩য় উপন্যাস ‘জোনাক দ্যুতি’ প্রকাশিত হয় এবার ২০২৩ এর একুশে বই মেলায়। এটিও রোমান্টিক। সবগুলো বই ই আছে ‘পেন্সিল’ এর ৩০০নং স্টলে। এছাড়াও এবার ছাপাখানা প্রকাশনী থেকে ‘এক পশলা বৃষ্টি’ নামে একটি গল্প সংকলন বের হয়েছে। সেখানে ‘তপ্ত ভালোবাসা’ নামে তার একটি ছোটগল্প রয়েছে।

হবিগঞ্জের মেয়ে ঝিনুকের জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা ওখানেই। ঢাকায় এমবিএ করতে এসে বিয়ে করে সংসার পাতেন। চাকরি করার ইচ্ছে থাকলেও বিয়ের পর পারিবারিক বেড়াজাল আর সন্তান পেটে আসায় তা আর হয়ে উঠেনি। তিনি বলেন, ‘খুব খারাপ লাগত। কিন্তু আমাদের দেশে মায়েদের চাকরি ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। বাচ্চা হলে খুব ভালো প্রফেশনে থাকা মায়েরাও চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়। তবে এখন সেই অতৃপ্তিটা নেই।

পেন্সিল আমার জীবনে জোনাক দ্যুতি হয়ে এসেছে। এখান থেকে যা পেয়েছি তা হয়তো চাকরি করেও পেতাম না। তাই তো আমার ‘জোনাক দ্যুতি’ বইটি পেন্সিল, পাঠককুল ও পেন্সিলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার ভাইকে উৎসর্গ করেছি। জীবনের যে পর্যায়ে নতুন করে নিজের পরিচিতি নিয়ে ভাবার সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল, কেবল ভাবি-আন্টি সম্মোধনে নিজের নামটা হারিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময় পেন্সিল আমার জীবনে এসেছে। এখন অনেকেই আমাকে ‘ঝিনুক চৌধুরী’ নামে চিনে!’
জানতে চাইলাম, মা নিশ্চয়ই খুব খুশি? তিনি জানান, ‘মা’তো ভীষণ খুশি! পরিবারের সবাইও খুব খুশি। আর বরের সাপোর্ট আছে পুরোপুরি।

বাচ্চারা প্রথমে একটু ঝামেলা করলেও এখন বুঝে গেছে, মায়েরটাও একটা কাজ।’ স্বামী ব্যবসায়ী, আইটি প্রফেশনাল। বাবা ছিলেন হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার। ২০২০ সালে মায়ের একটি বই প্রকাশিত হয়। যা বাবার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ নিয়ে লিখা। একভাই এক বোনের সংসারে পেয়েছেন অবাধ স্বাধীনতা এবং ছিল বিকশিত হওয়ার সুযোগ। অনেক দেরি হলেও বিকশিত হয়েছে তার সেই সুপ্ত প্রতিভা। ভবিষ্যতে প্রথম সারির উপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত হবে ঝিনুক, এটাই কামনা।

×