ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাসিরন এখন জয়িতা

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৩ নভেম্বর ২০২২

বাসিরন এখন জয়িতা

বাল্য বিয়ের শিকার নীলফামারীর সবুজপাড়া গ্রামের বাসিরন আক্তারের সঙ্গে আলাপ হলো

বাল্য বিয়ের শিকার নীলফামারীর সবুজপাড়া গ্রামের বাসিরন আক্তারের সঙ্গে আলাপ হলো। তার কথায় জানা গেল  অভাব অনটন আর পরিবারের চাপের মাঝে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া একজন শিশুকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে বাবা তাকে বাল্যবিয়ে দেন। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। এরপর সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। অনাগত সন্তানের খবরে স্বামী খুশি না হয়ে  নির্যাতন শুরু করে। সেই নির্যাতনে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।

স্বামীর সংসারেও অভাব-অনটন আর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়েই আবারও গর্ভে সন্তান আসে। দ্বিতীয় এই সন্তানটিকেও নষ্ট করার জন্য স্বামীর পরিবারের চাপ সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসে। এরপর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ।
বাসিরন আরও জানিয়েছেন, সে যুব উন্নয়ন ও মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ নেয় সামিনা আপার পরামর্শে।

এরপর বাবার বাড়ির আশপাশের লোকদেরও কাপড় সেলাইয়ের কাজ শুরু করে। এরপর সামিনা আপার সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করছে। সেই থেকে এখানেই আছেন। দোকানের কাজের ফাকে পাঁচ-ছয়জনকে সেলাইয়ের কাজ শেখান। তারাও কিছু করে পারিশ্রমিক দেন। এই দুটো দিয়েই চলছে বাসিরনের  ছেলেকে নিয়ে সংসার। বাসিরন তার সামিনা আপার মতো  জয়িতা পুরস্কার অর্জন করে।
ডোমার উপজেলা সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএম হাবীব মর্তুজা বলেন, আমরা যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে দুই ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকি। একটা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আরেকটা অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণগুলো আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হয়, অপ্রাতিষ্ঠানিকগুলো স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণগুলো করে থাকি।
সামিনা ও বাসিরন আমাদের এখানে প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেনিং করেন। তিনি নীলফামারী থেকে চার মাসের একটা কোর্স করে ও যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রথম ৪০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। এরপর সামিনা নতুন করে লেখাপড়া শুরু করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী পাস করেন।

তিনি আরও বলেন, সামিনা বাসিরন তাদের দুঃখটাকে পরশ পাথর হিসেবে গ্রহণ করে আজকে  স্বাবলম্বী হয়েছে।  উপজেলা পরিষদের মার্কেটে সামিনার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনেক মেয়ে এখন সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ও স্বাবলম্বী হচ্ছে। সামিনা ও বাসিরন আমাদের এখানে একটা উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। তাকে দেখে অন্য বেকার যুব মহিলারা এগিয়ে আসছেন।

আমরা এ রকম অসংখ্য সামিনা ও বাসিরন যুব উন্নয়নের মাধ্যমে তৈরি করেছি।
ডোমার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরন্নাহার শাহাজাদী বলেন, সামিনা ও বাসিরন  জয়িতার পুরস্কার লাভ করেন। তারা সফল নারী উদ্যোক্তা। তাদের দেখে ডোমারের পিছিয়ে পড়া নারীরা এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

×