
উচ্চ-স্তরের চিন্তা শক্তি মানুষের মনকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়, যেখানে একাধিক অনন্য ধারণা মিশ্রিত হয়ে গভীর উপলব্ধিতে রূপান্তরিত হয়। ঠিক যেমন রংগুলো মিশে নতুন রঙ গঠন করে, তেমনি এই চিন্তার মিশ্রণ থেকে বিশ্বকে স্পন্দিত করার মতো প্রজ্ঞা জন্মায়। তবে এই ক্ষমতা স্ব জন্মসূত্রে আসে না, এটি একটি বিশেষ গুণ যারা নিজেদের মানসিক সীমা পেরিয়ে যায়, তারা এই মর্যাদা অর্জন করেন। নিচে তুলে ধরা হলো চারটি দিক, যা উচ্চ-মানসিক চিন্তাধারার ব্যক্তিরা সচরাচর লক্ষ্য করেন, আর অন্যরাও হয়তো ধরেন না:
১. যারা সংগ্রহ করেন অনন্য অভিজ্ঞতা
জীবনের বুদ্ধি বেশিরভাগই লুকিয়ে থাকে অবচেতন মনেই। আমরা যা অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তা মিলেমিশে কোটি কোটি ধারণার গোলক তৈরি করে। যখন কোনো সমাধানের দরকার পড়ে, তখন সেসব ধারণা নিজের প্রতিক্রিয়ায় জন্ম নেয়। কিন্তু যদি আপনার অবচেতন মন অন্যদের মতো হয়, তাহলে আপনি উৎপাদন করবেন স্বাভাবিক ও সস্তা সমাধান। জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সেইসব মানুষের বুদ্ধিমত্তা, যারা অজানা পথ অতিক্রম করেন। উচ্চ-স্তরের চিন্তাবিদরা সাধারণ বই না-ও পড়ে, তারা সীমাবদ্ধ সিনেমা না-ও দেখে; তারা প্রান্তিক গন্তব্যে পৌঁছে, নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধান করে।
২. তারা খুঁজে পান এমন ধারণা, যা অন্যরা প্রত্যাখ্যান করে
নতুন কোনো ভাবনা নেওয়া অনেকেরই প্রিয় নয়। কেউ মনে করেন এটা ঝুঁকিপূর্ণ, কেউ আবার পরিবর্তনে অনুতপ্ত। কিন্তু উচ্চ-মানসিক চিন্তাবিদরা নতুন ধারণাকে দৃষ্টিতে আনার আগে তাকে যাচাই করেন, খোলামেলা মন ও কিছুটা সন্দেহ দুটোই রাখেন। ইন্টারনেট, ক্রিপ্টোকারেন্সি বা অনন্য বাজার যেগুলো ছিল প্রাথমিকভাবে জনপ্রিয় নয় সেইসব সম্ভাবনার দিকে তারা তাকিয়েছেন। গবেষণাও সমর্থন করে খোলা মন ও যুক্তিপূর্ণ সন্দেহ দুইয়ের সমন্বয়ের গুরুত্ব।
৩. তারা গড়ে তুলেন ‘পোস্টজুডিস’, শুধুই ‘প্রেজুডিস নয়’
‘প্রেজুডিস’ মানে কোনো বিষয়ে পূর্বগৃহীত ধারণা, ‘পোস্টজুডিস’ মানে পর্যবেক্ষণ ও তথ্য যাচাই করে মতামত গঠন। সাধারণ মানুষ প্রায়শই প্রতিটি বিষয়ের উপর অনভিজ্ঞতাবশত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়; আর যদি এমন কোনো বিষয়ে মত দেওয়া হয়, তারা তা কঠোরভাবে ধরে রাখে। কিন্তু উচ্চ-মানসিক চিন্তাবিদ তখনই মত গঠন করেন, যখন তারা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হন। তারা ভুলে স্বাগত জানান, নিজেকে যথার্থ প্রকাশ করতে পারলে।
৪. তারা প্রশ্ন করেন যথার্থভাবে
জ্ঞানলব্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন। অনেকেরই প্রশ্ন করা কঠিন, কারণ এর অর্থ স্বীকার করতে হয় ‘আমি জানি না’। উচ্চ-মানসিক চিন্তাবিদদের ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক। তারা প্রশ্ন করেন, কারণ তারা জানেন জিজ্ঞাসা করেই শেখা সম্ভব। গবেষণাও বলে, এমন কৌতূহল কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, সম্পর্ক ও সামাজিক যোগাযোগকেও সমৃদ্ধ করে।
বিশ্ব এখন উদ্ভাবনী এবং সমাধানমুখী চিন্তার প্রয়োজন, যা শুধুমাত্র উচ্চ-স্তরের চিন্তাবিদরা প্রদান করতে পারে। এই চারটি গুণ আপনি নিজের মধ্যেও প্রয়োগ করতে পারেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার তৈরি করুন, নতুন ও অসম্প্রচারিত ধারণাগুলো যাচাই করুন, তথ্যভিত্তিক মত গঠন করুন এবং যথাযোগ্য প্রশ্ন করুন। এই তিনটি ধাপ আপনাকে গোড়াপথ থেকেই চিন্তার উচ্চতর স্তরে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdeambmn
আফরোজা