ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক

জাতির উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন: মির্জা গালিব

মামুন শেখ, জবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৭ জুলাই ২০২৫

জাতির উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন: মির্জা গালিব

ছবি: সংগৃহীত

হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. মির্জা গালিব বলেছেন, “জাতির উন্নতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য। কে পাহাড়ি, কে বাঙালি, কে হিন্দু, কে মুসলমান—এসব ভেদাভেদ নয়, নাগরিক হিসেবে সবার সমান অধিকার থাকতে হবে। আমাদের এমন একটি সামাজিক চুক্তির দিকে যেতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি হবে অহিংস ও যুক্তিভিত্তিক।”

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শাখা ইসলামী ছাত্র শিবির আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।

ড. গালিব বলেন, “রাজনীতিকে আর পেশিশক্তির জোরে চালানো যাবে না। কাউকে হেনস্তা করে রাজনৈতিক অবস্থান গড়া অনুচিত। আমাদের এমন একটি সমাজ গড়তে হবে, যেখানে সবাই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির কল্যাণে একযোগে কাজ করবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই দেশের তরুণদের ভেতরে একটি বড় পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আছে। সেই পরিবর্তন আনতে হলে তাদের প্রযুক্তি ও দক্ষতার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখার মতো করে গড়ে তুলতে হবে।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “একটি সাফল্য আরেকটি সাফল্যের দ্বার খুলে দেয়। তবে প্রতিটি অর্জনের পরে নতুনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্ভাবনী শক্তির অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত মানুষ তৈরির কারখানা, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না।”

তিনি আরও বলেন, “একটি রাষ্ট্রের সংবিধান যদি দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে গঠিত হয়, তাহলে সেখান থেকে সুস্থ রাজনীতি আশা করা যায় না। গালাগালির রাজনীতি বাদ দিয়ে ভালোবাসার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ হলো একটি অপরূপ বাগান, তবে এর কোনো অভিভাবক নেই। তরুণরাই হবে এ দেশের দায়িত্বশীল, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক মালি।”

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর পল্টন থানার আমীর ও জবি শাখা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি শাহীন ইসলাম বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে মাদক ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান থাকবে না। সচেতন ছাত্রসমাজই সেই পরিবর্তনের সূচনাকারী হবে।”

ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাইদি বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচের বড় অংশ রাষ্ট্র দেয়, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের, এমনকি রিকশাচালকের টাকাও আমাদের পড়াশোনায় খরচ হয়। তাই আমাদের উচিৎ তাদের প্রতি সম্মান ও দায়িত্বশীলতা দেখানো। সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড—তাই কেবল উচ্চশিক্ষা নয়, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষাও গ্রহণ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম অন্যদের আগেই শুরু করেছি। আমরা চাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন। ছাত্র শিবিরের এই আয়োজন প্রশংসনীয়, অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোকেও এমন উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জবি শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন, প্রভোস্ট ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাদী এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। নবীন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

আসিফ

×