ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

রাগে-কষ্টে তেতে উঠেছেন? জীবন বদলে দেবে বিজ্ঞানীদের ৯০ সেকেন্ডের এই ফর্মুলা!

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:৪১, ৯ জুলাই ২০২৫

রাগে-কষ্টে তেতে উঠেছেন? জীবন বদলে দেবে বিজ্ঞানীদের ৯০ সেকেন্ডের এই ফর্মুলা!

কখনও এমন হয় কি না হঠাৎ কারও একটা কথা, কোনো একটা ঘটনা যেন আপনাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেয়? রাগ, দুঃখ, অভিমান একসাথে সব অনুভূতিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে মনে। তখন যদি আপনি নিজেকে মাত্র ৯০ সেকেন্ড সময় দেন, তাহলে হয়তো অনেক কিছু বদলে যেতে পারে। অন্তত তেমনটাই বলছেন আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত সুখ গবেষক মো গাওদাত।

এই ‘৯০ সেকেন্ড রুল’ শুধু কোনো বইয়ের পাতায় লেখা তত্ত্ব নয়, বরং গাওদাতের নিজের জীবন থেকেই উঠে এসেছে। ২০১৪ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে তার ছেলে আলি চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে মারা যান। সন্তান হারিয়ে তিনি যেন এক মুহূর্তে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৭ দিন পরেই তিনি কলম ধরেন একটি বই লেখেন সুখ খোঁজার উপায় নিয়ে। সেই বই আজ বিশ্বজুড়ে সুখ নিয়ে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।

দীর্ঘ দুই দশকের গবেষণায় গাওদাত দেখেছেন, কীভাবে আমাদের চিন্তাভাবনা আর অনুভূতি সুখ কিংবা দুঃখ তৈরি করে। তার মতে, জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে আমরা যদি ৯০ সেকেন্ড নিজেকে দিই, সেই রাগ, কষ্ট, হতাশা সবকিছুর মধ্যেই এক নতুন দিক খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

এই অভ্যাসের ভিত্তি তৈরি হয়েছে হার্ভার্ডের নিউরোসায়েন্টিস্ট জিল বোল্ট টেইলরের গবেষণার ওপর। তিনি প্রমাণ করেছেন, কর্টিসল বা অ্যাড্রিনালিনের মতো মানসিক চাপের হরমোন শরীর থেকে দূর হতে মাত্র ৯০ সেকেন্ড লাগে।

গাওদাত বলেন, “সমস্যা হচ্ছে আমরা বারবার সেই চিন্তাটা মনে করি। আর প্রতিবারই সেই ৯০ সেকেন্ড আবার শুরু হয়। অথচ একবার যদি নিজেকে বলি, ‘এই ৯০ সেকেন্ড পার হলে আমি নতুন করে ভাবব’, তখনই আসে বদল।”

একটা উদাহরণ দিই ধরুন, গাড়ি চালাতে গিয়ে কেউ হুট করে সামনে চলে এল। আপনি হয়তো রেগে গেলেন, মুখ দিয়ে কটু কথা বের হলো। কিন্তু অফিসে গিয়ে যদি বারবার সেই ঘটনাটা সবাইকে বলেন, সেটা আপনাকে আরও খারাপ অনুভব করাবে। বরং যদি তখন একটু শান্ত হোন, প্রিয় গানটা চালিয়ে দিন, হয়তো মনের রংটাই বদলে যাবে।

গাওদাত বলেন, “আমার তিনটা প্রশ্ন থাকে নিজের জন্য-
১. এটা কি সত্যি?
২. আমি কি কিছু করতে পারি?
৩. আমি কি এটাকে মেনে নিয়েও কিছু করতে পারি?”

“বেশিরভাগ সময়ই আমরা যে কারণে কষ্ট পাই, সেটা আদৌ সত্যি নয়। হয়তো সঙ্গী একটা কিছু বলেছে, আপনি ভেবেছেন সে আর ভালোবাসে না। কিন্তু সত্যি কি তাই?”

প্রথম প্রশ্নের উত্তর যদি হয় ‘না’, তাহলে নিজের কষ্টটাও ছেড়ে দিন। যদি হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে পরের ধাপে যান। কিছু করার মতো থাকলে সেটা করুন, আর যদি না থাকে, তবে মেনে নিন বাস্তবতাকে এটাই হলো ‘কমিটেড অ্যাকসেপ্টেন্স’।

গবেষণা বলছে, নতুন অভ্যাস তৈরি করতে ১৮ থেকে ২৫৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিন্তু গাওদাত মনে করিয়ে দেন, “জীবন ভালো-মন্দে ভরা। সবসময় সে আপনার পছন্দ মতো চলবে না। কিন্তু প্রতিক্রিয়া আপনি কীভাবে দিচ্ছেন, সেটাই ঠিক করে দিচ্ছে আপনি কে।”

তাই এবার থেকে যখন কোনো কষ্ট আপনাকে গ্রাস করতে আসে, একবার থামুন। নিজেকে দিন মাত্র ৯০ সেকেন্ড। তারপর ভাবুন, আপনি সেই কষ্টে ডুবে থাকবেন, নাকি আলোয় ফিরবেন? হয়তো এই একটুখানি থামা, বদলে দেবে আপনার পুরো দৃষ্টিভঙ্গি।

 

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2wfxn98f

আফরোজা

×