
ছবি: সংগৃহীত।
সাধারণত আমরা সামনের দিকে হাঁটাই অভ্যাস করি। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন মাত্র ১০ মিনিট পিছন দিকে হাঁটা—যা ‘রেট্রো ওয়াকিং’ নামেও পরিচিত—স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তির জন্য আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর একটি অনুশীলন হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ব্যতিক্রমী অনুশীলন শরীরের ভিন্ন পেশি সক্রিয় করে, মস্তিষ্কের নতুন নিউরাল পথ তৈরি করে এবং শরীরকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও বাড়াতে পারে।
চলুন জেনে নিই প্রতিদিন ১০ মিনিট পেছন দিকে হাঁটার ৭টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপকারিতা—
১. ভারসাম্য ও সমন্বয় উন্নত করে:
পেছন দিকে হাঁটার সময় পায়ের স্থিতিশীলতা ও মূল পেশিগুলো (কোর মাসল) সক্রিয় হয়, যা সামনের দিকে হাঁটার সময় কম ব্যবহৃত হয়। এটি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে যাওয়া ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য।
২. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়:
পেছন দিকে হাঁটা স্বাভাবিক নয় বলে এতে মনোযোগ ও চিন্তার ব্যবহার বেশি হয়। ফলে এটি মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি ও নিউরোপ্লাস্টিসিটি উন্নত করে। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, রেট্রো ওয়াকিং মনোযোগ ও নির্বাহী নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সহায়ক, যা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতেও কার্যকর।
৩. ক্যালোরি বার্নে কার্যকর:
২০১৭ সালের Journal of Biomechanics–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেছন দিকে হাঁটা সামনের দিকের হাঁটার তুলনায় প্রায় ৪০% বেশি ক্যালোরি বার্ন করে। ফলে এটি সময় সাশ্রয়ী ওজন কমানোর ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে।
৪. পায়ের পেশি ও গ্লুটস শক্তিশালী করে:
পেছন দিকে হাঁটা বিশেষভাবে কোয়াড্রিসেপস ও গ্লুটস পেশিগুলোকে সক্রিয় করে, যা সামনের দিকে হাঁটার সময় কম ব্যবহৃত হয়। এটি নিচের অংশের পেশি শক্তিশালী করে এবং শরীরের স্থিতিশীলতা বাড়ায়।
৫. হাঁটুর ব্যথা কমায় ও জয়েন্টকে শক্তিশালী করে:
রেট্রো ওয়াকিং হাঁটুর সামনের অংশে চাপ কমায়। হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভোগা রোগীদের জন্য এটি থেরাপিতে ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, এটি হাঁটুর ব্যথা কমাতে এবং পুনর্বাসনে সহায়ক হতে পারে।
৬. শরীরের ভঙ্গিমা বা পজচার উন্নত করে:
পেছন দিকে হাঁটার সময় সতর্ক থাকা লাগে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সোজা হয়ে হাঁটে। এটি মেরুদণ্ড সোজা রাখতে সহায়তা করে এবং কোর মাসল সক্রিয় রাখে।
৭. মানসিক প্রশান্তি ও মেজাজ ভালো করে:
নিয়মিত একঘেয়ে ব্যায়ামের বদলে পেছন দিকে হাঁটা মজাদার একটি পরিবর্তন এনে দিতে পারে। এটি শরীরচর্চায় উৎসাহ জাগায়, মন ভালো করে এবং স্ট্রেস হ্রাস করে।
পেছন দিকে হাঁটার সময় নিরাপদ স্থান বেছে নিন এবং শুরুতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হোন। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন। এই ব্যতিক্রমী কিন্তু কার্যকর অভ্যাসটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ করে নিতে পারলে আপনি শরীর ও মনের এক নতুন রূপান্তর উপভোগ করতে পারবেন।
মিরাজ খান