কোমর ব্যথা
আমরা দৈনন্দিন জীবনে যতটুকু সচল থাকা দরকার ততটুকু সচল থাকি না। প্রতিদিন আমরা ১০ ঘন্টা বা এর বেশী সময় বসে থাকি। গবেষকদের মতে প্রতিদিন ২০,০০০ ধাপ হাঁটা দরকার কমপক্ষে ১০,০০০ কিন্তু আমরা তা করি না। গবেষণায় দেখা গেছে কোমর ব্যথা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাওয়ার কারণ হল একই ভঙ্গিতে অনেক ক্ষণ থাকা ।
এছাড়াও সারাদিনের কাজকর্মের মর্ধ্যে একটু অসাবধানতায় ভয়ানক কোমর ব্যথা হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়াস বেসিনে মুখ ধোঁয়ার সময় কোমর ব্যথা হতে পারে। অফিসে যাওয়ার সময় জুতার ফিতা বাঁধতে গিয়ে কোমর ব্যথা হতে পারে, কাঁশি দিতে গিয়ে কোমর ব্যথা হতে পারে ইত্যাদি সামান্য একটু সাবধানতার অভাব হলেই বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
মিসেস বন্যা খাতুন, বয়স ৫০বছর, থাকেন বাগেরহাটে। তিনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়াস বেসিনে মুখ ধোঁয়ার সময় হঠাৎ করে কোমরে আঘাত পান। তিনি প্রচন্ড কোমর ব্যথায় সোঁজা হতে পারছেন না।
চিকিৎসা: - চিকিৎসার পুর্বে সঠিক ফিজিক্যাল এক্সমিনেশনের মাধ্যমে বের করতে হবে রুগীর কোন স্ট্রাকচারে সমস্যা। যেমন- মাসল, টনেডন, লিগামেন্ট, ক্যাপসুল, ডিস্ক, নার্ভ, বার্সা ইত্যাদি। এছাড়াও ল্যাবরেটরী ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট এর মাধ্যমে দেখতে হবে অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা। এ সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার সমন্বয় করে চিকিৎসা পরিকল্পনা করা হয়। অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ মাস্কুলো স্কেলিটাল বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিবেন। যিনি কোমর ব্যথা চিকিৎসায় পারদর্শী ।
ব্যথার স্থানে ঠান্ডা সেক দিন ১০ মিনিট করে সকালে ১ বার ও রাতে ১ বার। সেক দেওয়ার পূর্বে নারিকেল তেল ও রসুন একসাথে গরম করে (কিছুক্ষণ গরম করার পর ব্রাউন কালার হলে তা ঠান্ডা করুন) উক্ত স্থানে হালকা লাগিয়ে ঠান্ডা (ভেজা সুতি কাপরের উপর দিয়ে বরফ লাগিয়ে) সেক দিবেন। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে- দুই হাত কোমরের পিছনে রেখে মাথা ও কাঁধ পিছনের দিকে বাঁকা করুন ৫ বার। প্রতিবারে ৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এভাবে ধরে রাখাকে ১০-১৫ সেকেন্ড-এ নিয়ে যাবেন। এই এক্সারসাইজ দিনে ২ বার করুন। প্রতিবারে ১০-১৫ বার।
পাঠক মনে রাখবেন ফিজিওথেরাপি ইজ মেডিসিন ফোর টুডে এন্ড টুমোরো। ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপতিক্রিয়া হীন যুগান্তকারী আধুনিক চিকিৎসা। বন্যা খাতুনের কোমরের কষ্টের অন্যতম কারণ মাসেল এর অসুস্থতা। কোমরের মাংসগুলোর মায়োফেসিয়াল রিলিজ, স্ট্রেসিং, স্ট্রেন্দ্রেনিং এবং স্ট্যাবিলাইজেশন এর মত চিকিৎসা অত্যান্ত উপকারী।
খাদ্য তাালিকা: ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এমন অনেক খাবার আছে যে খাবার গুলো ব্যথা কমায় সেই খাবার গুলো খাবেন। যেমন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ব্যথা নিরাময়ে কিছু প্রাকৃতিক ঔষধের কথা বলেছেন যেমনঃ মধু (ব্যথার স্থানে মধুর সাথে ভিনেগার মিশিয়ে মাখালে ব্যথা কমে) খেজুর, কালো জিরা, ওলিভ অয়েল, তরমুজ ইত্যাদি খাবার ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত খান, প্রচুর পানি পান করুন। গরু, খাসী এবং মহিষের মাংস খাবেন না। প্রতিদিন ৩০ মিনিট গাঁয়ে রোদ লাগান। ধূমপান বর্জন করুন।
এক্সারসাইজ : নিয়মিত এক্সারসাইজ হাঁড়ের ডেনসিটি বাড়িয়ে জয়েন্টের সাথে সম্পকৃত বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে যাদের বয়স ৬০ এর উপরে তারা যদি সপ্তাহে ৫দিন ৩০মিনিট রেগুলার এক্সারসাইজ করে তাহলে বছরে যে টাকা তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে তা অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়াও ব্যায়াম ডিপ্রেশন কমিয়ে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। সুতরাং নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন, সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন এবং কোমর ব্যথার কষ্ট থেকে মুক্ত থাকুন ।
প্রফেসর আলতাফ সরকার
মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ
এস