
ছবিঃ রয়টার্স
গাজায় বসবাসরত দুই মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনি এখন মারাত্মক খাদ্য সংকটে ভুগছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, অপুষ্টিজনিত কারণে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
GHF-এর খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) গত মে মাসের শেষ থেকে গাজায় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, তারা এ পর্যন্ত প্রায় ৯ কোটি ১০ লাখ খাবার বিতরণ করেছে, যা মূলত খাবারের বাক্স আকারে দেওয়া হচ্ছে।
যদিও আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিবিসি সরাসরি এই সহায়তা বাক্সগুলো দেখতে পারেনি, তবে GHF কর্তৃক প্রকাশিত ছবি ও তথ্য পর্যালোচনা করে এবং বিভিন্ন সাহায্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি ভেরিফাই বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে।
বাক্সে কী থাকে?
GHF সম্প্রতি প্রকাশিত ছবি ও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সহায়তা বাক্সে বেশিরভাগই শুকনো খাদ্যসামগ্রী রয়েছে, যেগুলো রান্না করতে পানি ও জ্বালানির প্রয়োজন হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—
পাস্তা
মসুর ডাল
ছোলা
গমের আটা
তিলের পেস্ট (তাহিনী)
রান্নার তেল
লবণ
ফাভা বিন
সবুজ মটর
অতিরিক্ত ও বিকল্প পণ্য:
বক্সে মাঝে মাঝে হালভা বার (তাহিনী ও চিনির মিশ্রণে তৈরি একটি জনপ্রিয় স্ন্যাকস), বিস্কুট, চকলেট, চা পাওয়া যায়। আলু ও পেঁয়াজও বিতরণ করা হচ্ছে, তবে এগুলো পুষ্টিমূল্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়।
পুষ্টিগুণের অভাব:
GHF-এর দেওয়া তথ্যমতে, একটি বাক্সে মোট ৪২,৫০০ ক্যালরি থাকে, যা গড়ে ৫.৫ জনকে ৩.৫ দিন খাওয়াতে পারে।
তবে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস-এর আন্তর্জাতিক সাহায্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গর্ডন বলেন, “এই খাদ্যসামগ্রীগুলো পেট ভরাতে পারে, কিন্তু প্রয়োজনীয় পুষ্টি দিতে পারে না। দীর্ঘদিন এই খাবার খেলে অ্যানিমিয়া বা স্কার্ভির মতো রোগ দেখা দিতে পারে।”
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের পুষ্টিবিদ ড. অ্যান্ড্রু সিল বলেন, এই খাবারে ক্যালসিয়াম, আয়রন, দস্তা ও ভিটামিন C, D, B12 এবং K-এর মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও শিশুদের উপযোগী খাবার নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) মতো সংস্থাগুলো সাধারণত সরাসরি খাদ্য বিতরণ ছাড়াও শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষ পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করে থাকে।
GHF এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বা ভবিষ্যতে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানায়নি।
খাবার পেলেও রান্নার সংকট:
যারা এই সহায়তা বাক্স পাচ্ছেন, তাদেরও রান্না করতে জ্বালানি ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়তে হচ্ছে। ওচা (OCHA) জানিয়েছে, গাজায় পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, এবং মানুষকে আবর্জনা পোড়ানোসহ অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে রান্না করতে হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতে, গাজায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ এবং কালোবাজারে গ্যাসের দাম আগের তুলনায় ৪০ গুণ বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গাজাবাসী এখন ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে ভুগছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে।”
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, “৯০,০০০ নারী ও শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়ে জরুরি চিকিৎসা সহায়তার অপেক্ষায় রয়েছে।”
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা