
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আবারও তীব্র সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত প্রাচীন মন্দির ‘তা মন্থম’ ঘিরে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন দুই দেশের কয়েকজন সেনাসহ বহু বেসামরিক নাগরিক।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার উদ্দার মিঞ্চেই প্রদেশে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের প্রশাসক সূত্র জানায়, কম্বোডিয়ার বাহিনী প্রথমে একটি নজরদারি ড্রোন পাঠানোর পর ভারী অস্ত্র, বিশেষ করে বিএম-২১ রকেট দিয়ে থাইল্যান্ডে হামলা চালায়। এতে থাইল্যান্ডের দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
ঘটনার পরপরই থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দেয় এবং সংঘর্ষ আরও ঘনীভূত হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, থাইল্যান্ড ৮৬টি সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে অন্তত ৪ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবশ্য দাবি করেছে, থাইল্যান্ডের বাহিনীই প্রথম গুলি চালিয়েছে এবং আত্মরক্ষায় তারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, থাই সেনারা উদ্দার মিনচেই ও প্রেইয়া বিহার প্রদেশে গোলা বর্ষণ করে, যার জবাবে পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে।
সংঘর্ষের জেরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। থাইল্যান্ড তাদের রাষ্ট্রদূতকে কম্বোডিয়া থেকে ফিরিয়ে এনেছে এবং কম্বোডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কম্বোডিয়াও তাদের কূটনীতিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে এবং থাই কূটনীতিকদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে থাইল্যান্ড সীমান্তে একটি এফ-৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রয়োজনে বিমান হামলারও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ওই এলাকায় একটি ল্যান্ডমাইনে বিস্ফোরণে একজন থাই সেনা আহত হন। এর আগে ১৬ জুলাই আরও তিনজন থাই সেনা ল্যান্ডমাইনে আহত হয়েছিলেন। থাইল্যান্ড এসব ঘটনার জন্য কম্বোডিয়াকে দায়ী করলেও কম্বোডিয়া দাবি করেছে, গৃহযুদ্ধকালে পোঁতা মাইনেই এ ঘটনার জন্য দায়ী এবং সেনারা পূর্বনির্ধারিত পথ থেকে বিচ্যুত হয়েই বিস্ফোরণের শিকার হন।
প্রায় ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ থাই-কম্বোডিয়া স্থলসীমান্তের বহু অংশ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চিহ্নিত না হওয়ায় প্রায়ই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বর্তমানে বন্ধ রয়েছে দুই দেশের সীমান্ত ক্রসিং ও বাণিজ্যপথ। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ না নিলে এই সংঘর্ষ দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটে রূপ নিতে পারে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=qAsurcFktMs
রাকিব