ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

মাত্র ৫ মিনিটেই লিভার ও কিডনিকে সুরক্ষা দিন মারাত্মক অসুস্থতা থেকে

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২৪ জুলাই ২০২৫

মাত্র ৫ মিনিটেই লিভার ও কিডনিকে সুরক্ষা দিন মারাত্মক অসুস্থতা থেকে

ছবি: সংগৃহীত।

আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ ‘ডিটক্স সেন্টার’ হল যকৃত (লিভার) ও কিডনি। এই দুটি অঙ্গ সারাক্ষণই শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে বের করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। তবে দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানিশূন্যতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এই দুটি অঙ্গের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে।

তবে সুস্থতার জন্য বড় কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই- মাত্র ৫ মিনিট সময়েই প্রতিদিন কিছু ছোট অভ্যাস গড়ে তুললেই যকৃত ও কিডনিকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

নিচে দেওয়া হলো এমন পাঁচটি সহজ উপায়, যা দৈনন্দিন জীবনে মাত্র কয়েক মিনিট সময় নিয়ে লিভার ও কিডনিকে রক্ষা করতে পারে প্রাণঘাতী রোগ থেকে।

১. পেটের উপর হালকা মালিশ করুন:
লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে প্রতিদিন হালকা মালিশ বেশ উপকারী। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, লসিকা নিঃসরণে সহায়তা করে এবং ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।

কীভাবে করবেন:
ডান দিকের পেটের উপর (লিভার যেখানে অবস্থিত) হাতের তালু দিয়ে গোল করে হালকা করে ২ মিনিট মালিশ করুন।

এরপর নিচের দিকে পিঠের দিকে গিয়ে কিডনির চারপাশে আলতো চাপ দিন।

ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে এই প্রক্রিয়া করুন।
এই অভ্যাস প্রতিদিন করলে ধীরে ধীরে যকৃত ও কিডনির সচলতা বাড়ে।

২. গরম পানিতে হলুদ মিশিয়ে কুলকুচি করুন:
অচেনা মনে হলেও, হলুদ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করা যকৃত ও কিডনির বিষাক্ত পদার্থ কমাতে সহায়তা করে। এতে ভেগাস নার্ভ উদ্দীপ্ত হয়, যা হজমতন্ত্র ও লিভারের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যেভাবে করবেন:
গরম পানিতে এক চিমটে হলুদ মিশিয়ে মুখে নিয়ে ৩০ সেকেন্ড কুলকুচি করুন এবং ফেলে দিন।

হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন উপাদান প্রদাহ কমায় ও লিভারকে সুরক্ষা দেয়।

৩. কাস্টর অয়েল (অ্যারাণ্ডি তেল) প্যাড গরম করে ব্যবহার করুন:
প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদান হিসেবে পরিচিত কাস্টর অয়েল। এটি লিভারের ড্রেনেজ বাড়াতে, পিত্ত নিঃসরণ সক্রিয় করতে ও হজমে সহায়তা করে।

যেভাবে করবেন:
একটি নরম কাপড় বা তুলায় ঠান্ডা প্রেস কাস্টর অয়েল ভিজিয়ে লিভারের উপর (পেটের ডান পাশে) রাখুন।

উপর থেকে গরম তোয়ালে বা হিটিং প্যাড দিয়ে ঢেকে দিন ৫ মিনিটের জন্য।
এই পদ্ধতি লিভারের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করতে সহায়ক।

৪. অ্যাকুপ্রেশার পয়েন্টে চাপ দিন:
রিফ্লেক্সোলজি ও অ্যাকুপাংচারের মাধ্যমে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করা যায়। প্রতিদিন মাত্র এক-দুই মিনিট চাপ দিলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণে সহায়তা করে।

গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট:
লিভার ৩ (LV3): বড় আঙুল ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝে। চাপ দিলে লিভারের শক্তি বাড়ে ও হজম ভালো হয়।

কিডনি ১ (KD1): পায়ের তলায়, মাঝামাঝি অংশে। চাপ দিলে কিডনি সচল হয় ও ক্লান্তি কমে।

৫. মৌরি বীজ চিবান:
মৌরি শুধু হজমেই নয়, লিভার ও কিডনি পরিষ্কার করতেও কার্যকর। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ বের করে দেয়, ফোলাভাব কমায় এবং টক্সিন দূর করে।

যেভাবে খাবেন:
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা খাবারের পর আধা চা চামচ মৌরি চিবিয়ে খেতে পারেন।
এটি পিত্ত নিঃসরণ বাড়িয়ে লিভারকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে।

আরও ভালো ফল পেতে, মৌরি বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি দিনভর চুমুক দিয়ে পান করুন।

মাত্র পাঁচ মিনিটের অভ্যাস দৈনন্দিন জীবনে রপ্ত করলে যকৃত ও কিডনির কার্যকারিতা বাড়ে, শরীর থাকে হালকা ও সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি এই ছোট ছোট পদ্ধতিগুলো স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

মিরাজ খান

×