ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ছুটির দিনে বর্ণিল  শহরের সংস্কৃতি  ভুবন 

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৫ জুলাই ২০২৫

ছুটির দিনে বর্ণিল  শহরের সংস্কৃতি  ভুবন 

শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষ্যবহ ‘মুখোমুখি’ নাটকের দৃশ্য

শুক্রবার ছুটির দিনে বর্ণিল রূপে আবির্ভূত হয় রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। এদিন শিল্পের আলোয় ঝলমল করেছে শহর ঢাকা। নগরীর নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়েছে বহুমাত্রিক আয়োজন। সেই সুবাদে সংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য কেটেছে সুন্দরতম সময়। কেউবা উপভোগ করেছেন মঞ্চে আসা নতুন নাটক। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও তাদের মননের উপযোগী নাটক দেখার সুযোগ পেয়েছে। চিত্রকর্ম দেখে প্রশান্তির অনুভব নিতে শিল্পরসিকদের অনেকেই ঢুঁ দিয়েছেন ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে।  শিল্পিত সরবতার গল্পময় সেসব আয়োজন নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।
এদিন সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাস্নাত শিল্পকলা একাডেমির মনসুন রেভ্যুলেশন শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় নির্মিত নাটক ‘মুখোমুখি’। নিরীক্ষাধর্মী নাট্য প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে ওয়েয থিয়েটার। শ্রাবণ সন্ধ্যায় একাডেমির নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। ভাবনা ও পরিকল্পনার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ধীমান চন্দ্র বর্মন। পরিপূর্ণ দর্শককে সঙ্গী করে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়।
নাটকটি সম্পর্কে নির্দেশক ধীমান চন্দ্র বর্মন বলেন, এখানে মুখোমুখি হয়েছে অভিনেতা ও দর্শক; রাষ্ট্র ও জনগণ। কখনোবা নিজেই নিজের মুখোমুখি। ম্যাকিয়াভেলির সূত্রে শাসকগোষ্ঠীর চরিত্রই ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখা। বিভ্রম, বিভ্রান্তিতে মায়ায় আচ্ছন্ন করে রাখা হয় জনগণকে। তবে ইতিহাস বলে, জনগণের মুখোমুখি হয়ে অবসান হয় শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের। তবু নতুন শাসকরা জনগণের কথা বলতে শেখে না। স্বার্থের পুরোনো আবর্তেই ঘুরপাক খায় তারা। সার্ভাইভালের জন্যই তখন মানুষ কথা বলে। স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে সবাই কর্তা হয়ে নিজেরা কথা বলতে শুরু করে। 
নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়,  স্বার্থের নেশায় বিভোর শাসকের কাছে গুরুত্বহীন মানুষ। শাসকের রক্তপিপাসায় প্রাণ যায় শত-হাজার নিরীহ জনগণের নিজেদের কথা বলতে গিয়ে। বেঁচে থাকার আশাটুকুও কেড়ে নেয় স্বার্থপর শাসকগোষ্ঠী। স্বজন হারানোর বেদনায় ভারি হয় বাতাস। মৃত মানুষের শেষ নিঃশ্বাস যেন সংঘবদ্ধ করে তোলে মজলুমকে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে ঘুড়ে দাঁড়াতে শেখে মানুষ নতুন দিনের আশায়।
প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আল মামুন, পলি চৌধুরী, ফৌজিয়া আফরিন তিলু, মুজাহিদুল ইসলাম রিফাত, শ্রীকান্ত মন্ডল, সঞ্জিত কুমার দে, সায়মা সেলিম আনিকা, স্বরূপ রতন লালন ও হাসিব উল ইসলাম। ব্যাক  স্টেজ ছিলেন  রবি প্রারম্ভ, মেহেদি হাসান সোহান,  মো. আশরাফুল ইসলাম, তানভীর আহমেদ, রবিউল আহমেদ, পলক দাস, রতন ধর, অর্পা বণিক, প্রিয়াংকা তালুকদার,  গৌতম দে ও শর্মিষ্ঠা রায়।
এদিন মঞ্চস্থ হয়েছে শিশুতোষ নাটক ‘বনের ধারে নদী’। মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। বিকেল ও সন্ধ্যায় প্রথম ও দ্বিতীয় প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। নাটকটি মঞ্চে এনেছে ইচ্ছেতলা নামের সাংস্কৃতিক সংগঠন। সৌমিত্র বসু রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মো. ফরহাদ আহমেদ শামীম।
নাটকের গল্পে উঠে এসেছে এক বনের গল্প। সেই বনের ধারে ছিল একটা নদী। বনে বাস করত নেকড়ে, হরিণ, হাতি, খরগোশ, বানর, প্রজাপতিসহ হাজার হাজার পশুপাখি। একদিন নেকড়ে বলল, এই নদী শুধু তার। এই নিয়ে ঝগড়া বেঁধে গেল হাতির সঙ্গে। হঠাৎ বন্দুক নিয়ে সেই বনে মানুষ এলো। তারা বলল, এই নদী শুধু মানুষের। শুরু হলো ভীষণ যুদ্ধ। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন হৃদো, রাজকন্যা, দিব্য, প্রাপ্তি, অরুদ্ধ, যাইফ, সাচমিন, আরিবা, নামিরা, আনাস, আরুশা, আহনাফ, অনুষ্কা, ঐশী, জয়িতা, আনায়াসহ অনেকে। 
এদিন ঢাকার নাট্যমঞ্চে আরেকটি নতুন নাটক। বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান শীর্ষক প্রযোজনাটি মঞ্চে এনেছে নাট্যদল অনুস্বর। সেগুন বাগিচার পাইওনিয়ার রোডের অনুস্বর স্টুডিওতে প্রযোজনাটির উদ্বোধন প্রদর্শনী হয়। বিকেলে ও সন্ধ্যায় নাটকটির দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাইফ সুমন ও মোহাম্মদ বারী রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ বারী। 
প্রযোজনাটির নির্দেশক মোহাম্মদ বারী বলেন, নাটকটি রচিত হয়েছে বর্তমান বিশ্বের যুদ্ধ পরিস্থিতি আর মানুষের অন্তর্গত অশুভ সত্তাকে কটাক্ষ করে। একই সঙ্গে এ নাটক প্রশ্ন তোলে যুদ্ধবাজ রাজনীতির ভয়ংকর অমানবিকতা ও পরিণতি নিয়েও। মিসরীয় নাট্যকার তৌফিক আল হাকিমের ‘আশ শাইতান ফিল খাতার’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ও বেলাল মোহাম্মদ অনুদিত খলিল জিবরানের ‘শয়তান’ গল্পের কিছু অংশের সংযোজনে রচিত হয়েছে ‘বুদ্ধিজীবীর বাসায় শয়তান’। 
নাটকটিতে অভিনয় করেছেন সাইফ সুমন,  মেরিনা মিতু, মাজেদুল মিঠু, নুরুজ্জামান সরকার ও মুত্মাইন্নাহ রীমা।
এছাড়া এদিন বিকেলে ধানমন্ডির সফিউদ্দীন শিল্পালয়ে আবু আল নায়েমের একক চিত্র প্রদর্শনীর সূচনা হয়। ছাপচিত্রের মাধ্যমে চিত্রকর্মের সজ্জিত শিল্পায়োজনের শিরোনাম ‘ক্রেভিং দ্য সেলফ ’। আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। 

প্যানেল

×