
ছবি: সংগৃহীত
লিভার মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীরকে বিষমুক্ত রাখা, হজম প্রক্রিয়া এবং শক্তি উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অথচ, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের কিছু নির্দিষ্ট খাবার এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, আপনার প্রিয় কিছু খাবারই হয়তো অজান্তেই লিভার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে! এখনই আপনার খাদ্যতালিকা পরীক্ষা করে দেখুন, এই উপাদানগুলো আপনার লিভারে বিষ ঢালছে কি না।
১. অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি পানীয়:
মিষ্টিযুক্ত খাবার এবং সফট ড্রিংকস, ফলের রস (আর্টিফিশিয়াল), এনার্জি ড্রিংকস – এগুলো লিভারের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু। অতিরিক্ত চিনি, বিশেষ করে ফ্রুক্টোজ, সরাসরি লিভারে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়, যা ফ্যাটি লিভার রোগের (Non-alcoholic Fatty Liver Disease - NAFLD) অন্যতম প্রধান কারণ। NAFLD যদি চিকিৎসা না করা হয়, তবে তা সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
২. প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড:
বার্গার, পিজ্জা, চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, ইনস্ট্যান্ট নুডুলস এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে উচ্চ মাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম এবং কৃত্রিম উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে, চর্বি জমা বাড়ায় এবং লিভারের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করে। এগুলো হজম করতে লিভারকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ।
৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল:
অ্যালকোহল লিভারের কোষগুলোর জন্য সরাসরি বিষাক্ত। অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের প্রদাহ, ফ্যাটি লিভার, অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার সিরোসিসের কারণ হয়। লিভারের অ্যালকোহল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা সীমিত, এবং অতিরিক্ত গ্রহণ লিভারকে ওভারলোড করে ফেলে।
আপনার লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয়:
এই খাবারগুলো সীমিত করুন বা বাদ দিন: আপনার খাদ্যতালিকা থেকে উপরের খাবারগুলো ধীরে ধীরে বাদ দিন বা এদের পরিমাণ সীমিত করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: তাজা ফল, শাক-সবজি, গোটা শস্য, স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (যেমন মাছ, মুরগির বুকের মাংস) এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক কার্যকলাপ লিভারকে সুস্থ রাখতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যদি আপনার লিভারের সমস্যা বা এর লক্ষণগুলো নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের সাথে দ্রুত পরামর্শ করুন।
আপনার লিভারের সুস্থতা আপনার হাতের মুঠোয়। খাবারের বিষয়ে সচেতনতা আপনার লিভারকে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে এবং আপনাকে একটি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন উপহার দিতে পারে।
ফারুক