ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ভুয়া শহীদের তালিকায় নাম, অনুদান ভাগাভাগি নিয়ে ফাঁস হলো আসল সত্য

সিকদার জোবায়ের হোসেন, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ২৫ জুলাই ২০২৫

ভুয়া শহীদের তালিকায় নাম, অনুদান ভাগাভাগি নিয়ে ফাঁস হলো আসল সত্য

পটুয়াখালীতে সরকারপ্রাপ্ত শহীদ অনুদানের টাকা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে বেরিয়ে এসেছে ভুয়া শহীদ তালিকাভুক্তির ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে—জুলাই ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনে অংশ না নিয়েও বশির সরদার (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে ‘শহীদ’ দেখিয়ে সরকারি অনুদান হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালি গ্রামের বাসিন্দা বশির সরদার, পেশায় একজন চা দোকানি ছিলেন। তিনি জেলা শহরের নিউমার্কেট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দোকান চালাতেন। গত বছর জুলাই মাসের প্রথমদিকে পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়ে তিনি আহত হন এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসা চলাকালে ১৫ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তবে বিষয়টি মোড় নেয় তখন, যখন অনুদানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে শুরু হয় পারিবারিক বিরোধ। এতে বঞ্চিত হয়ে বশিরের বড় ভাই নাসির সরদার গত ২২ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি দাবি করেন—বশির গণ-আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হননি, বরং ভিন্ন কারণে মারা গেছেন।

জেলা প্রশাসনের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলে। জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর এক চিঠিতে বশিরের নাম শহীদ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেন এবং পরিবারকে প্রদান করা সঞ্চয়পত্র স্থগিতের অনুরোধ জানান।

জানা যায়, আহত বশিরকে আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাঁর পরিবার ঢাকায় চিকিৎসার সময় তথ্য উপস্থাপন করে। এরপর সরকারি অনুদান হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়।

তবে ঘটনার পেছনে রয়েছে আরও জটিলতা। বশিরের স্ত্রী রেবা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী আন্দোলনে অংশ নেননি, শুধুমাত্র পায়ে লোহা ঢুকে আহত হয়েছিলেন। পরে ভাই নাসিরের চাপেই শহীদের তালিকায় নাম তোলার কাগজে সই করতে বাধ্য হই। অনুদানের টাকা পেয়ে এখন সে ও তার পরিবার আমাকে চাপ দিচ্ছে ভাগ দেয়ার জন্য।”

অন্যদিকে, নাসির সরদার তার দায় স্বীকার করে বলেন, “ভুল তথ্য দিয়ে শহীদের তালিকায় নাম উঠানো হয়েছে। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমি নিজেই ডিসির কাছে অভিযোগ করেছি।”

বশিরের পিতা সেকান্দার সরদার দাবি করেন, “ছেলের চিকিৎসা ও দাফন-কাফনে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ অনুদানের পুরো টাকাই আমার পুত্রবধু একা ভোগ করছে।”

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় প্রতিনিধি সজিবুল ইসলাম সালমান বলেন, “আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে শহীদের তালিকায় নাম ওঠানো শুধু অনৈতিক নয়, অপরাধও বটে। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া দরকার।”

উল্লেখ্য, এর আগেও সরকারি সহায়তা পেতে ভুয়া তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্তির অভিযোগ উঠেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পটুয়াখালীর এই ঘটনাটি তারই আরেকটি প্রতিচ্ছবি।

 
 

রিফাত

×