ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

পারমানবিক সাবমেরিন ভাসিয়ে পুতিনের নয়া হুংকার, মস্কোর এই পদক্ষেপে পশ্চিমারা কি সন্ত্রস্ত?

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৭, ২৫ জুলাই ২০২৫

পারমানবিক সাবমেরিন ভাসিয়ে পুতিনের নয়া হুংকার, মস্কোর এই পদক্ষেপে পশ্চিমারা কি সন্ত্রস্ত?

আসছে রোববার মস্কোর পিচ ঢালা বা কংক্রিটে বাঁধানো রাজপথে কুচকাওয়াজ করবে না রুশ নৌবহর। সেদিন দেশটির নৌ দিবস। আনুষ্ঠানিকতা বাতিলের কারণ – নিরাপত্তা সংকট। তবে আসলেই কি তাই? পরাশক্তিগুলো কত রকম নাটক সাজায়, সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণে। নিরাপত্তা সংকটের চাইতে এই ‘নাটক’-টাকেই অনেকেই মনে করছেন অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য। কেননা, মূল আকর্ষণ তো আগেই শেষ করে ফেলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

চতুর্থ প্রজন্মের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এমন সাবমেরিনে ফ্ল্যাগশিপ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। সাবমেরিনটির নাম কেনিয়াস পোজারস্কি।

রুশ উত্তরাঞ্চলে নৌবহরে এই ডুবোজাহাজ যুক্ত হয়। ফ্ল্যাগশিপের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে শ্বেত সাগর তীরবর্তী শহর সেভেরভিনস্কের জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র সেভমাশে। সেভমাশ হচ্ছে রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির একমাত্র কেন্দ্র।

পুতিন সেখানে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য—পারমাণবিক অস্ত্র বিবেচনায় কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিনে বিশ্বসেরা হওয়া। এতে করে রাশিয়া বিশ্বশক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

সাবেক কেজিবি গুপ্তচর ভ্লাদিমির পুতিন আরও বলেন, “রাশিয়ার নৌ পারমাণবিক ইউনিট শিগগিরই আরও চারটি বোরেই-এ শ্রেণির সাবমেরিনে সমৃদ্ধ হবে। এর মধ্যে দুটি ইতোমধ্যে নির্মাণাধীন।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, কেনিয়াস পোজারস্কিকে ফ্ল্যাগশিপ করা হওয়ার কথা ছিল গত বছরই। কিন্তু সাবমেরিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পূর্ণ সক্ষমতা অর্জনে দেরি হওয়ায় অনুষ্ঠানটি পিছিয়ে যায়।

পেসকভ আরও জানান, রুশ নৌবাহিনীর অগ্রগতি নিয়ে শিগগিরই প্রেসিডেন্ট পুতিন সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেবেন।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৪ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকেই রাশিয়া তার নৌবহরকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।

এরই মধ্যে বোরেই-এ শ্রেণির পাঁচটি সাবমেরিন পূর্ব এশিয়ায় মোতায়েন করেছে রাশিয়া। তবে প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করতে রাশিয়া চৌকষ সাবমেরিন কৌশল গ্রহণ করেছে—যাতে সাবমেরিন বিধ্বংসী মার্কিন নৌজাহাজ সহজে রুশ সাবমেরিনকে লক্ষ্য করতে না পারে। এমনটাই মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।

মস্কোর প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, ব্যারেন্টস সাগর পাড়ি দিয়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহরে পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এরপরই নাকি শুরু হবে ‘আসল খেলা’।

অর্থাৎ—পরমাণু অস্ত্রে নির্ভরশীল প্রতিরোধ কৌশলে রাশিয়া আরও একধাপ এগোতে চায়। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, খেলা আসলে ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে মস্কো।

রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলে নৌবহরের কাছে বর্তমানে সাতটি সাবমেরিন রয়েছে। এর মধ্যে সোভিয়েত আমলে নির্মিত তৃতীয় প্রজন্মের ডেল্টা ফোর শ্রেণির পাঁচটি এবং দুইটি চতুর্থ প্রজন্মের নতুন সাবমেরিন—বোরেই ও বোরেই-এ শ্রেণির।

গবেষকদের মতে, কেনিয়াস পোজারস্কির ফ্ল্যাগশিপ ঘোষণা, পুতিনের ভাষণ ও সামরিক প্রদর্শনী—সব মিলিয়ে পশ্চিমাদের মনে একধরনের ভয় ও দুশ্চিন্তা ছড়াতেই এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন।

শেখ ফরিদ

×