ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় বিতরণ করা GHF খাদ্য বাক্সে কী আছে?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২৬ জুলাই ২০২৫

গাজায় বিতরণ করা GHF খাদ্য বাক্সে কী আছে?

ছবি: সংগৃহীত

দুই মিলিয়নের বেশি ফিলিস্তিনি বর্তমানে গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকটে দিন পার করছেন। জাতিসংঘ বলছে, প্রতিদিনই সেখানে অপুষ্টিতে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি সংগঠন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) মে মাসের শেষ দিকে থেকে গাজায় খাদ্য বিতরণ শুরু করে।

GHF দাবি করেছে, তারা ইতোমধ্যে ৯ কোটি ১০ লাখ ‘মিল’ সরবরাহ করেছে, যার বড় অংশ এসেছে খাদ্য সহায়তা বাক্স আকারে। যদিও আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় BBC এই বাক্সগুলো সরাসরি পরীক্ষা করতে পারেনি, তবে GHF প্রকাশিত ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় উঠে এসেছে।

GHF’র খাদ্য বাক্সে কী থাকে?
GHF সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে দুটি ছবি প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, বাক্সে থাকে মূলত শুকনো খাদ্যসামগ্রী, যেমন:

  • গমের আটা
  • মসুর ডাল
  • ছোলা
  • ফাভা বিনস
  • পাস্তা
  • তেল
  • আয়োডিনযুক্ত লবণ
  • তাহিনি (তিলের পেস্ট)
  • হালভা বার (এক ধরনের মিষ্টি স্ন্যাক)

ঘটনাচক্রে, এগুলোর অনেকগুলো রান্না করার জন্য পানি ও জ্বালানি প্রয়োজন, যা গাজায় বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে।

GHF বলেছে, একেকটি বাক্সে ৪২,৫০০ ক্যালোরি থাকে এবং প্রতিটি বাক্স গড়ে ৫.৫ জনকে ৩.৫ দিন চলার মতো খাবার সরবরাহ করে। তবে পেঁয়াজ ও আলু দেওয়া হলেও সেগুলোর ক্যালোরি বিবেচনায় ধরা হয়নি।

কখনও কখনও বিকল্প আইটেমও থাকে, যেমন: চা, বিস্কুট ও চকোলেট।

লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স-এর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গর্ডন BBC Verify-কে বলেন, “এই খাদ্যতালিকা ক্ষুধা নিবারণে উপযোগী হতে পারে, কিন্তু এতে পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। এটা একটি ‘প্রথমিক সাহায্য’ খাদ্য প্যাকেট, ক্ষুধা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি ঝুঁকিপূর্ণ।”

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের খাদ্য দীর্ঘদিন খেলে “হিডেন হাঙ্গার” দেখা দেবে, অর্থাৎ পেট ভরলেও শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হবে। এর ফলে রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া), স্কার্ভির মতো রোগ হতে পারে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক পুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু সিল বলেন, এই খাদ্যসামগ্রীর ঘাটতির মধ্যে রয়েছে —

  • ক্যালসিয়াম
  • আয়রন
  • জিংক
  • ভিটামিন সি, ডি, বি১২ এবং কে

তিনি বলেন, বিশেষ করে শিশুদের উপযোগী খাবারের অভাব রয়েছে।

জাতিসংঘ, ডব্লিউএফপি (WFP) এবং অন্যান্য সংস্থা সাধারণত ভিন্নধরনের নীতিতে খাদ্য বিতরণ করে যেমন: বাল্ক খাদ্য ও বিশেষ পুষ্টি সহায়তা যা শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য তৈরি করা হয়।

GHF এই বিষয়ে BBC Verify-এর পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ ও সমালোচনার জবাব দেয়নি।

এমন পরিস্থিতিতেও গাজাবাসীদের জন্য রান্নার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে জ্বালানি ও পানির সংকট।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক দপ্তর (OCHA) জানিয়েছে, গাজায় পানি সংকট দ্রুত মারাত্মক আকার নিচ্ছে। পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার করে রান্না করছে, যা ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।

ডব্লিউএফপি বলছে, রান্নার গ্যাসের সরকারি সরবরাহ বন্ধ হয়েছে এবং তা এখন কালোবাজারে ৪০০০% বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধসহ মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৯০ হাজার নারী ও শিশু তাৎক্ষণিক চিকিৎসা চাহিদায় রয়েছে।

GHF খাদ্য সহায়তা প্রচারণা চালালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পুষ্টিমান নিশ্চিত করা না গেলে দীর্ঘমেয়াদে বিপদ বাড়বে। শুধু ক্যালোরি নয়, প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করাও মানবিক সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×