
ছবি: সংগৃহীত
ফুসফুস মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরকে সচল রাখে। অথচ, বায়ু দূষণ, ধূমপান, পরিবেশগত কারণ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কারণে এই ফুসফুস প্রতিনিয়ত ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অনেক সময় ফুসফুসের সমস্যা নীরবে শুরু হয় এবং লক্ষণগুলো স্পষ্ট হওয়ার আগেই অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়, অথচ এগুলো ফুসফুসের নীরব ক্ষয়ের ইঙ্গিত। এই ৫টি লক্ষণ দেখলেই বুঝুন আপনি ঝুঁকির মধ্যে আছেন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
১. দীর্ঘস্থায়ী কাশি:
যদি আপনার কাশি আট সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, বিশেষ করে যদি তা শুকনো না হয়ে কফযুক্ত হয়, তবে এটি ফুসফুসের ক্ষতির একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে। সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু-এর কাশি সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। দীর্ঘস্থায়ী কাশি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, সিওপিডি (COPD) এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারেরও পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।
২. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া:
ব্যায়াম বা সামান্য পরিশ্রমের পরেই যদি আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অথবা শুয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, তবে এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাসের একটি বড় ইঙ্গিত। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সামান্য অস্বস্তি মনে হলেও, ফুসফুসের রোগ বাড়ার সাথে সাথে এটি দৈনন্দিন কাজকর্মেও বাধা সৃষ্টি করে। শ্বাসকষ্ট ফুসফুসের রোগ, যেমন - অ্যাজমা, সিওপিডি বা পালমোনারি ফাইব্রোসিসের লক্ষণ হতে পারে।
৩. বুকে ব্যথা:
যদি আপনার বুকে, বিশেষ করে শ্বাস নেওয়ার সময় বা কাশি দেওয়ার সময় তীক্ষ্ণ বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা অনুভব করেন, তবে এটি ফুসফুসের সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। এই ব্যথা বুকের পাঁজরে বা পিঠের দিকেও অনুভূত হতে পারে। ফুসফুসের প্রদাহ, সংক্রমণ (যেমন নিউমোনিয়া বা প্লিউরিসি) এমনকি ফুসফুসের ক্যানসারের কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে।
৪. শ্বাস নেওয়ার সময় অস্বাভাবিক শব্দ (Wheezing):
শ্বাস নেওয়ার সময় যদি শিসের মতো শব্দ হয়, তবে এটি শ্বাসনালীর সংকীর্ণতার কারণে হতে পারে। অ্যালার্জি, অ্যাজমা, সিওপিডি বা ফুসফুসের অন্য কোনো প্রদাহজনিত রোগের কারণে শ্বাসনালী সংকুচিত হলে এই ধরনের শব্দ হয়। এই ধরনের শব্দ ইঙ্গিত দেয় যে আপনার ফুসফুসে বাতাস সঠিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
৫. ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
যদি পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম সত্ত্বেও আপনি ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে এটি ফুসফুসের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। ফুসফুস যখন পর্যাপ্ত অক্সিজেন রক্তে সরবরাহ করতে পারে না, তখন শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে পেশী দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীর শক্তি হারায়, যার ফলস্বরূপ অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়। এটি সিওপিডি বা ফুসফুসের অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের একটি সাধারণ লক্ষণ।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি অনুভব করেন, বিশেষ করে যদি সেগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সময়ের সাথে সাথে খারাপ হতে থাকে, তবে দেরি না করে একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ (Pulmonologist) বা আপনার পারিবারিক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ফুসফুসের গুরুতর ক্ষতি এড়াতে এবং জটিলতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আপনার ফুসফুসের স্বাস্থ্য আপনার সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
ফারুক