
আজ ২৫ জুলাই, ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সচেতনতা দিবস’। আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষ, বিশেষ করে ছোট শিশুরা, পানিতে ডুবে মারা যায়। ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে; যার বেশিরভাগই শিশু। কিন্তু এই মৃত্যুটা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব, যদি আমরা সবাই সতর্ক হই এবং কিছু নিয়ম মেনে চলি।
এই বছরের জুলাই মাসে দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া অরিত্র হাসান তার দুই বন্ধুর সঙ্গে হিমছড়ি সৈকতে গোসল করতে যায়। ৭ জুলাই সকাল সকাল তারা সাগরে নামলে প্রবল স্রোতের কারণে তিনজনেই ডুবে যায়। দুই ঘণ্টার মধ্যেই এক বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার হয়, আর পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া গেলেও অরিত্রের খোঁজ এখনও মেলেনি। তাকে খুঁজতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, লাইফগার্ড আর বিমান বাহিনী সবাই তল্লাশি চালাচ্ছে, কিন্তু অরিত্র এর কোনো খবর নেই।
অরিত্রের মা-বাবা এখনও সৈকতে এসে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য আজান দেন আর তাকে খুঁজে ফিরতে চান। তাদের কষ্ট ও হাহাকার পুরো দেশে এক আবেগ তৈরি করেছে। এ ঘটনা আমাদের সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে—সাঁতার না জানলে, কিংবা নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকলে সাগর কিংবা অন্য কোথাও স্নানের সময় খুব সাবধান হতে হবে।
কক্সবাজারের মতো পর্যটন এলাকায় এখনো যথেষ্ট লাইফগার্ড নেই, নিরাপদ গোসলের জন্য জায়গা ঠিক করা হয়নি। ফলে অনেক সময় ছোট বড় সবাই ঝুঁকিতে থাকে। গ্রামেও পুকুর, খাল-নালা যেখানে শিশুরা খেলে, সেগুলো অনেক সময় বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর পেছনে বড় কারণ হলো সাঁতার না জানা, নজরদারির অভাব, আর অনেক সময় শিশুদের পানির কাছে অবাধে চলাফেরা করার সুযোগ দেয়া। তাই বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে সাঁতার শেখানো, অভিভাবকদের সচেতন করা, ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে বেষ্টনি দেয়া এবং কমিউনিটির দায়িত্ব নেওয়া খুবই জরুরি।
সরকার ও নানা উন্নয়ন সংস্থা ‘নিরাপদ পানিতে জীবন’ নামে প্রকল্প চালাচ্ছে, দুর্ঘটনাজনক জায়গাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইউনিসেফ ও সেভ দ্য চিলড্রেনও এই কাজে যুক্ত আছে।
এক খবরে জাতীয় শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. শামীম আরা বলেছেন, “পানিতে ডুবে মৃত্যু একেবারেই রোধযোগ্য। পরিবার, স্কুল, সরকার আর সমাজকে মিলেই কাজ করতে হবে।”
আজকের দিনে সবাই মিলেই আমরা এই সংকল্প নিতে পারি, যেন আর কারও জীবন পানিতে ডুবে না যায়। সবাই যেন নিরাপদে পানিতে গোসল করতে পারে, আর সচেতন থাকি নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষায়।
রাজু