
২০১০ সালের ৩ জুন রাতে রাসায়নিকের গুদামে রক্ষিত দাহ্য পদার্থের কারণে পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলীতে ভয়াবহ আগুনে ঝরে যায় ১২৪টি প্রাণ। সে সময় আহত হয় কয়েক শতাধিক মানুষ। এ ঘটনায় দেশিয় ডাক্তার দিয়েই চলছিলো আহতদের চিকিৎসা।
কিন্তু রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দূর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সরকারের এমন আন্তরিকতাকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের সচেতন মানুষ।
আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে ২ জন ডাক্তার ২ জন নার্স এবং ভারত থেকে দুইজন বার্ন ও ট্রমা চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং একজন প্রশিক্ষিত নার্স আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১-১২ টার মধ্যে চায়না থেকে ৫ জন এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৫ জন বার্ণ সার্জন এসে দেশে পৌঁছেছেন। বিদেশ থেকে আসা ডাক্তাররা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে উঠেছেন। জাতীয় বার্ণ এন্ড সার্জারি ইনস্টিটিউট কাছে হওয়ায় তাদেরকে ইন্টার কন্টিনেন্টালে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ ও আহতদের চিকিৎসা সহায়তায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. চোং সি জ্যাক ঢাকায় এসেছেন।
বুধবার আরও তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে এসেছেন। তারা হলেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র ডিরেক্টর বিজয়া রাও, পুন লাই কুয়ান ও লিম ইউ হান জোভান।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, সিঙ্গাপুর এবং চীন থেকে আসা মেডিকেল টিমকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে তারা আহতদের চিকিৎসা দেয়া শুরু করবেন।
আসার সময় তারা বেশ কিছু উন্নতমানের সরঞ্জামাদি নিয়ে এসেছেন বলেও তিনি জানান।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আহত শিক্ষার্থীদেরকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আরো চিকিৎসক আনার পরিকল্পনার কথা জানান।
বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর থেকে যারা এসেছেন তারা হলেন, ড. জু ইয়ংজি, ওয়ে গুইরু, তান কি ইউয়েন, অং জোলিন এবং ইরিনি অং মেই জিন।
চীন থেকে যারা এসেছেন তারা হলেন, লিও সুহুয়া, ইয়ান ফেই, লি জে, জাহাং জিলিন এবং লিও হুয়ান।
বিদেশ থেকে যে সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছেন তাদের সেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. অধ্যাপক নাসির উদ্দিন।
তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তারা অনেক প্রশিক্ষিত ডাক্তার। আমাদের নিজস্ব ডাক্তার এবং বিদেশী ডাক্তারদের সমন্বয়ে আহতদের চিকিৎসা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, পরামর্শ ও প্রয়োজনে তারা সরাসরি চিকিৎসা কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছনে। আমাদের চিকিৎসার সঙ্গে তারা একমত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা কতদিন থাকবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা যতদিন চান যুক্ত থাকতে পারেন।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ জুলাই ট্রাজেডিতে এ পর্যন্ত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন আহত হয়েছেন প্রায় ২ শতাধিক। তবে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫১ জন, যাদের মধ্যে শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪০ জন।
সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মালেকা পারভীন জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের দেশিয় এবং বিদেশি ডাক্তাররা মিলে নিশ্চয়ই আহতদেরকে সুস্থ্য করে তুলবেন। বিদেশি ডাক্তার আমন্ত্রণ করে এনে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশি চিকিৎসকরা সেবা দিতে আসায় আহতদের মানসিকতা চাঙ্গা হবে যেটা চিকিৎসার সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সরকারকে গোটা জাতি আজ সাধুবাদ জানাচ্ছে।
ঢাকার ব্যবসায়ী শরিফুর রহমান বলেন, আহতদের চিকিৎসায় সরকারের আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। আমাদের সন্তানরা ভালো হয়ে উঠবে এমন স্বপ্ন আমরা দেখছি। সরকার এ ভাবে আমাদের সকল বিপদে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশেষ জ্ঞান বিনিময় এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুরের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। দুর্ঘটনার পর আহতদের চিকিৎসায় এই হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের পাঠানো কেস রিপোর্টের ভিত্তিতেই চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে আসছে।
এদিকে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স¤প্রতি এ দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশের জন্য সর্বাত্মক চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার ঘোষণার পর দ্রুত উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করে মেডিকেল দল পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় চিকিৎসকদের এই মানবিক সহায়তা উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে, দুই দেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দগ্ধদের উন্নত ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
রিফাত