
আপনার আঙুল নাড়ানো বা এমনকি শুধুমাত্র নাড়ানোর চিন্তাও এখন কম্পিউটার চালাতে যথেষ্ট হতে পারে। এই অভাবনীয় প্রযুক্তি বাস্তব করছে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা। তাদের গবেষণা ল্যাব ‘রিয়েলিটি ল্যাবস’-এ তৈরি করা হয়েছে একটি বিশেষ ব্রেসলেট, যা আপনার হাতের পেশীতে উৎপন্ন বৈদ্যুতিক সংকেত পাঠ করে আপনার কম্পিউটার বা স্মার্টফোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে—শারীরিকভাবে কিছু নাড়ানো ছাড়াই।
এই ব্রেসলেট দেখতে অনেকটা একটি মোটা স্মার্টওয়াচের মতো হলেও এটি সময় বলে না, বরং আপনাকে হাত নাড়িয়েই স্ক্রিনে কার্সর সরানো, অ্যাপ খুলে ফেলা কিংবা আকাশে নাম লেখার মতো কাজ করতে দেয়।
কীভাবে কাজ করে এই ব্রেসলেট?
ব্রেসলেটটি ব্যবহার করে 'ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি' (EMG) নামের একটি প্রযুক্তি। এটি হাতের পেশীতে থাকা আলফা মোটর নিউরন থেকে আসা বৈদ্যুতিক সংকেত গ্রহণ করে। এই সংকেত এতটাই শক্তিশালী যে ত্বকের বাইরেই তা পড়া যায়। মেটার দাবি, এই সংকেত হাত নাড়ানোর আগেই চলে আসে, তাই ইচ্ছা করলেই আপনি কিছু নাড়ানো ছাড়াই কমান্ড দিতে পারবেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) শক্তিতে নতুন সম্ভাবনা
মেটার গবেষক টমাস রিয়ারডন ও তাঁর দল প্রায় ১০ হাজার মানুষের হাতে ব্রেসলেট পরিয়ে সংকেত সংগ্রহ করেন। এরপর একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সাধারণ সংকেতগুলোর প্যাটার্ন শনাক্ত করা হয়। ফলে নতুন কোনো ব্যবহারকারী এলেও ব্রেসলেটটি সঙ্গে সঙ্গেই কাজ শুরু করতে পারে, আগে থেকে কোনো প্রশিক্ষণের দরকার পড়ে না।
রিয়ারডন বলেন, “আপনি আঙুল নাড়াতে চাইছেন এমন সংকেতও এই ব্রেসলেট বুঝে ফেলে। আপনি যদি ঠিকভাবে অনুশীলন করেন, তাহলে আঙুল নাড়ানো ছাড়াও টাইপ করতে পারবেন।”
প্রতিবন্ধীদের জন্য আশার আলো
পাশাপাশি, যারা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বা শারীরিক অক্ষমতায় ভুগছেন, তাদের জন্যও এটি হতে পারে যুগান্তকারী প্রযুক্তি। কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইতোমধ্যে এমন রোগীদের উপর এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা যাচাই করছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্ক বা অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান সিনক্রনের মতো স্টার্টআপগুলো মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বানানোর চেষ্টা করছে, মেটার এই পন্থা তুলনামূলক সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত। এতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই—শুধু ব্রেসলেট পরে ব্যবহার শুরু করা যায়।
Jahan