ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

এই ৫টি লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন, আপনার কিডনি সত্যিই সুস্থ!

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ৮ জুলাই ২০২৫

এই ৫টি লক্ষণ দেখলেই বুঝবেন, আপনার কিডনি সত্যিই সুস্থ!

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি সাধারণত নীরবেই কাজ করে। সারাক্ষণ রক্ত পরিশোধন, শরীরের তরল ভারসাম্য ঠিক রাখা ও অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলে। শরীরের এই দুই অঙ্গ, যা আকারে মুঠোর মতো, পাঁজরের নিচে অবস্থিত এবং ২৪ ঘণ্টা কাজ করে। হৃদযন্ত্র বা পাকস্থলীর মতো তারা তেমন করে সাড়া দেয় না—না ভালো থাকার সময়, না খারাপ থাকার সময়।

তবে মজার বিষয় হলো, কিডনি সুস্থ থাকলে তারও কিছু নিঃশব্দ প্রকাশ আছে। সবকিছু বুঝতে সব সময় রক্তপরীক্ষার দরকার পড়ে না। মাঝে মাঝে ছোট ছোট বিষয় পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না। এখানে কিছু সহজ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো, যা সাধারণত চোখে পড়ে না, তবে সুস্থ কিডনির নিঃশব্দ বার্তা বহন করে—

১. সকালে নিঃশ্বাস থাকে পরিষ্কার ও সতেজ

খারাপ নিঃশ্বাস শুধু মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা বা হজমের গোলমাল থেকে হয় না। কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য, বিশেষ করে ইউরিয়া পরিষ্কার করে। যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না, তখন রক্তে টক্সিন জমে যায়, যার ফলে নিঃশ্বাসে মাছের মতো বা অ্যামোনিয়া ধরনের গন্ধ আসে, বিশেষ করে সকালে।

যদি সকালে উঠে মুখে শুষ্কতা না থাকে, অদ্ভুত স্বাদ না লাগে এবং দাঁত ব্রাশের আগেও নিঃশ্বাসে অস্বস্তিকর গন্ধ না থাকে, তবে ধরে নিতে পারেন কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে।
এটি এমন এক লক্ষণ, যা আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়। তবে যারা নিঃশ্বাসের সূক্ষ্ম পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তারা প্রায়ই কিডনির সমস্যা আগেভাগেই বুঝতে পারেন, কিংবা নিশ্চিত হতে পারেন সব ঠিক আছে।

২. দিনভর এনার্জি থাকে স্বাভাবিক, ক্লান্তি ছাড়াই

শুধু মানসিক চাপ বা ঘুমের অভাবে ক্লান্তি আসে—এমন ভাবা ভুল। নিঃসন্দেহে ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। তবে কিডনি সুস্থ থাকলে, শরীরে লাল রক্তকণিকা তৈরি ঠিক থাকে, কারণ কিডনি ‘এরিথ্রোপয়েটিন’ নামক হরমোন তৈরি করে, যা অস্থিমজ্জাকে আরও লাল রক্তকণিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেয়। এই রক্তকণিকাগুলো শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।

দিনভর যদি ক্লান্তি না আসে, দুপুরে হঠাৎ ঘুম বা সন্ধ্যায় ঝিমুনির প্রবণতা না থাকে, তবে বুঝবেন কিডনি ভালো আছে। সুস্থ কিডনি শরীরকে শুধু বাঁচিয়ে রাখে না, বরং দিনটিকে সহজ আর স্বাভাবিক করে তোলে।

৩. ত্বক থাকে কোমল, বেশি লোশন ছাড়াই

শুষ্ক ত্বক মানেই পানি কম খাওয়া বা আবহাওয়ার পরিবর্তন—সব সময় তা নয়। ত্বক আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ পানির ভারসাম্যের প্রতিফলন। সুস্থ কিডনি শরীরের তরল ও সোডিয়াম-পটাশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের ভারসাম্য ঠিক রাখে। যখন এই ভারসাম্য ঠিক থাকে, ত্বক থাকে মসৃণ, টানটান বা খসখসে নয়—এমনকি ময়েশ্চারাইজার ছাড়াই।

যদি সারাদিন ত্বক কোমল, স্বস্তিদায়ক এবং স্বাভাবিক জৌলুসে থাকে, বিশেষ করে হাত ও পায়ের পাতায়, তবে বুঝবেন, কিডনি তার কাজ ঠিকঠাক করছে। এটি সুস্থ কিডনির অদৃশ্য উপহার।

৪. সকালে মুখ ফোলা থাকে না

ঘুমের অভাব বা বেশি নুন খাওয়ার কারণে মুখ ফুলে যেতে পারে—এটাই আমরা সাধারণত ভাবি। কিন্তু কিডনি শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করে দেয়। সকালে চোখের নিচে বা মুখে ফোলা ভাব যদি থাকে, তবে বুঝতে হবে শরীরে পানি জমেছে, যা কিডনি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

সকালে যদি মুখ থাকে সতেজ, স্বাভাবিক এবং ফোলা না থাকে, তবে বুঝবেন, কিডনি সারারাত ঠিকঠাক পানি বের করে দিয়েছে। মুখের এই সতেজ ভাব আসলে শরীরের অভ্যন্তরীণ সুস্থতার প্রতিফলন।

৫. পেশিতে থাকে স্বস্তি, টান বা ঝিঁ ঝিঁ ধরে না

কঠিন ব্যায়াম বা ভুল ভঙ্গিতে ঘুমানোর কারণে পেশির টান ধরা সাধারণ ঘটনা। তবে কিডনিও শরীরের ইলেকট্রোলাইট বা খনিজের ভারসাম্য ঠিক রাখে—বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। এই খনিজের ভারসাম্য নষ্ট হলে পেশি টান ধরা, খিঁচুনি বা চোখের পাতায় অস্বাভাবিক ঝাপটানি দেখা দেয়।

যদি শরীরের পেশি থাকে ঝামেলা-মুক্ত, রাতে ঘুমের সময় বা ব্যায়ামের পর পায়ে টান না ধরে, তবে বুঝবেন, শরীরে খনিজের ভারসাম্য ঠিক আছে এবং কিডনি ভালোভাবে কাজ করছে।
যখন কিডনি ঠিক না থাকে, তখন শরীর প্রথমেই পেশির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়—পায়ে টান ধরা বা বেশিক্ষণ বসে থাকার পর পেশির শক্ত হয়ে যাওয়া দিয়ে।

আবির

×