
ছবি: সংগৃহীত
প্রাচীন ইতিহাস আর সভ্যতার নিদর্শন যেখানে আজও নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে ময়নামতির নাম স্মরণীয় হয়ে থাকে। বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার ময়নামতি পাহাড়ি এলাকায় বিস্তৃত এই প্রত্নস্থলটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য নিদর্শন। সময়ের পরিক্রমায় সভ্যতার কোলাহল থেমে গেলেও, ময়নামতির ধ্বংসাবশেষ আজও সেই বৌদ্ধযুগের ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ইতিহাসের পথ ধরে
ময়নামতি এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—শালবন বিহার, ইটখোলা মুরা, কোটিলা মুরা, চন্দ্রনাথ মুরা এবং রূপবান মুরা। ধারণা করা হয়, ৭ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে এই এলাকা বৌদ্ধ শিক্ষা, সাধনা এবং সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র ছিল। শালবন বিহার ছিল একটি মহাবিহার বা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা শিক্ষা গ্রহণ ও ধর্মচর্চা করতেন।
নিঃশব্দে বলা ইতিহাস
ময়নামতির প্রতিটি ইট, প্রতিটি খণ্ডিত মূর্তি আজও যেন কথা বলে। এখানে খননকালে আবিষ্কৃত হয়েছে ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, শিলালিপি এবং বহু প্রাচীন মুদ্রা, যা বৌদ্ধ সভ্যতার শৌর্য-বীর্যের নিদর্শন বহন করে। ময়নামতির মিউজিয়ামে সংরক্ষিত এই নিদর্শনগুলো দেশের ইতিহাসপ্রেমী মানুষ এবং পর্যটকদের কাছে বিশেষ আগ্রহের বিষয়।
আধুনিককালে গুরুত্ব
আজ ময়নামতি শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক কৌতূহলের বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষার এক জীবন্ত দলিল। ইউনেস্কোর সম্ভাব্য বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পাওয়ার মতো যোগ্য এই স্থান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ময়নামতি সেনানিবাসের নিকটবর্তী এই এলাকাটি ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি পর্যটন সম্ভাবনাও বয়ে এনেছে।
ময়নামতি আমাদের অতীতের বৌদ্ধ সভ্যতার এক নিঃশব্দ সাক্ষী। কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া সেই সভ্যতার স্মৃতি রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। শুধু ইতিহাসের বইয়ে নয়, ময়নামতি যেন আমাদের জীবন্ত ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
Mily