
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে নিচু শহর জেরিকো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৪৬ ফুট নিচে অবস্থিত। এটি শুধু নিচুতম শহরই নয়, বরং পৃথিবীর প্রাচীনতম বসতিগুলোর একটি। এর ইতিহাস প্রায় ১১ হাজার বছর পুরনো।
জেরিকো পশ্চিম তীরের জর্দান উপত্যকায়, মৃত সাগরের কাছাকাছি অবস্থিত। এর উষ্ণ মরু আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক জলাধার এই অঞ্চলকে প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিকাজ ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। আফ্রিকা, এশিয়া ও আরব অঞ্চলের মধ্যে সংযোগকারী পথ হিসেবে জেরিকোর গুরুত্ব ঐতিহাসিকভাবে অনেক বেশি।
জেরিকোর ভৌগোলিক অবস্থানও বেশ অনন্য। এটি জর্দান রিফট উপত্যকায় অবস্থিত, যা গ্রেট রিফট ভ্যালি সিস্টেমের অংশ। এই অঞ্চলে টেকটোনিক প্লেট সরে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে এমন গভীর ভূমিধ্বস, যা জেরিকোকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু শহরে পরিণত করেছে।
পরিবেশ শুষ্ক ও মরুভূমি হলেও, জেরিকোর আশেপাশে প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও জর্দান নদীর কারণে বহু যুগ ধরে মানুষ এখানে বসবাস করে আসছে।
২০২৩ সালে ইউনেস্কো জেরিকোর উত্তরে অবস্থিত "টেল এস-সুলতান" এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। এই স্থানটি জেরিকোর প্রাচীন ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, এখানে মানুষের বসতি ছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৯০০০ সালে, অর্থাৎ নাতুফিয়ান যুগে।
৯ম থেকে ৮ম সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে, প্রাচীন নীয়োলিথিক জেরিকো ছিল একটি গঠনমূলক স্থায়ী বসতি। এখানকার প্রতিরক্ষা দেয়াল, খাল এবং একটি টাওয়ারের নিদর্শন সেই সময়কার উন্নত স্থাপত্যের প্রমাণ বহন করে।
জেরিকোর নাম শোনা যায় বাইবেলের গল্পেও। সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা হলো 'জেরিকোর যুদ্ধ', যেখানে বলা হয় শহরের দেয়াল ধ্বসে পড়েছিল।
শুধু প্রাচীন ইতিহাস নয়, জেরিকোতে ইসলামী যুগেরও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো হিশামের প্রাসাদ বা 'খিরবাত আল-মাফজার'। এটি ৮ম শতাব্দীতে উমাইয়া খিলাফতের সময় নির্মিত হয়।
এই মরু প্রাসাদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর অসাধারণ মোজাইক কারুকাজ, বিশেষ করে ‘ট্রি অব লাইফ’ বা 'জীবনের বৃক্ষ' নামক মোজাইকটি। প্রাসাদটিতে বসবাসের ঘর, স্নানাগার ও জটিল পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল, যা সেই সময়কার উন্নত প্রকৌশল ও স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ।
প্রাচীন ইতিহাস, ধর্মীয় কাহিনি ও অপূর্ব স্থাপত্যশিল্প— সব মিলিয়ে জেরিকো পৃথিবীর এক অনন্য শহর, যার গল্প আজও মানুষকে চমকে দেয়।
সূত্র: ডেইলি এক্সপ্রেস
এম.কে.