![ভারতীয় পেঁয়াজে বাজারে স্বস্তি ভারতীয় পেঁয়াজে বাজারে স্বস্তি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/b2-2404021806.jpg)
আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকা
আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ টিসিবির মাধ্যমে ‘ট্রাকসেল’ কার্যক্রমে বিক্রি শুরু হওয়ায় বাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে দাম কমে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি থেকে ভোক্তারা ৪০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। বছরের অধিকাংশ সময় ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি পেঁয়াজ। রমজানের শুরুতেও পেঁয়াজের দাম চড়া ছিল।
ওই সময় বেশি দামের আশায় কৃষকরা অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করে দেয়। ফলে ‘রাখি’ পেঁয়াজের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ভারতের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করতে পারছে টিসিবি। পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ যাতে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা পান সে বিষয়ে এখন নজর দেওয়া প্রয়োজন। কারণ পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে ধারাবাহিকভাবে আমদানি করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে টিসিবি ভবনের সামনে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের বিক্রয় কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ট্রাকসেলের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। ফলে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে সাধারণ ক্রেতারাও কম দামের পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাবেন। টিসিবির এই কার্যক্রমের ফলে বাজারে স্বস্তি ফিরেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতে নির্বাচন চলছে, তাদের কৃষক আন্দোলন চলছে, ভোক্তা পর্যায় আছে, সবকিছু মোকাবিলা করে তারা প্রতিশ্রুতি রেখেছে। এজন্য আমি ধন্যবাদ দেই। তিনি বলেন, ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, সে সম্পর্কের কারণেই কিন্তু আমরা রমজানে আজকে পেঁয়াজটা পেয়েছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়, প্রতিবেশী দেশ থেকে যদি আমরা পেঁয়াজ না আনতাম, আমাদের পেঁয়াজের বিকল্প হল মিসর, পেঁয়াজের বিকল্প হলো তুর্কি (তুরস্ক)। আনতে জাহাজে লাগে অনেক সময়, আর এই পরিমাণ আনা যায় না।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের প্রথম চালানে ১৬৫০ টন গত রবিবার রেলপথে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে বাংলাদেশে আসে। ফ্যামিলি কার্ডধারীদের জন্য চলমান বিপণন ব্যবস্থার পাশাপাশি পুরোনো নিয়মে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ট্রাকসেলের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম যে আমরা এই পেঁয়াজটা এনে ভোক্তা পর্যায়ে রোজার আগে পৌঁছাতে পারব কিনা।
আপনারা বিশ্বাসও করবেন না এই পেঁয়াজ দিল্লি থেকে লোডিং হয়ে, আমাদের দর্শনা হয়ে, সিরাজগঞ্জ হয়ে ট্রাকে আজকে এখানে এসেছে, এটার জন্য আনবিলিভেবল লজিস্টিকস দরকার হয়েছে। এটা এমনভাবে এসেছে যে একটা পেঁয়াজও নষ্ট হয়নি। তিনি বলেন, পলিসি মেকিং বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু আমাদেরকে অনেক সময় ঝুঁকি নিতে হয়েছে। পেঁয়াজ আনা, দরদাম ঠিক করা এই প্রত্যেকটা জিনিসই কিন্তু আমরা নিজেরা বসে ঠিক করেছি দায়িত্ব নিয়ে। এর মধ্যে অনেক ঝুঁকি ছিল যে দেখা গেল পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে কমে গেল। তারপর কিন্তু আমরা এই ঝুঁকি নিয়েছি।
রোজার প্রথম সপ্তাহে পেঁয়াজ না আনতে পারার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এই একই পেঁয়াজ ভারত সরকার আবুধাবিতে ১২০০ ডলারে বিক্রি করছে। আমাদের জন্য নির্ধারিত ছিল ৮০০ ডলার। যখন আমরা ক্যালকুলেশন করলাম, দেখলাম ৮০০ ডলারের পেঁয়াজ আনলে আমাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে, বা বাজারের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় সম্ভব না। ফলে আমাদের বাণিজ্য সচিব তিনদিন তার টিম নিয়ে কন্টিনিউয়াস নেগোসিয়েশন করেছে। এজন্য আমাদের দেরি হয়েছে ৭ দিন।
আবার ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারতের নিষেধাজ্ঞা ছিল, তারা সেটা এক্সটেন্ড করেছে। যদিও আমাদের ৫০ হাজার টন এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ছিল না। এই শর্ত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আমাদের পেঁয়াজ আনতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের এই যে অভিজ্ঞতা হল, বাকি পেঁয়াজগুলো আনাও আমাদের জন্য কোনো সমস্যা হবে না। আমরা দেখব যে কত দ্রুত আমরা আনতে পারি। তাড়াহুড়ো করব না, আমাদের লোকাল পেঁয়াজও আছে। আমরা চাই না আমাদের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক।
বাজারটা যেন এমন থাকে যেন কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তারাও যেন অতিরিক্ত মূল্য না দিতে হয়। আমরা এই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছি ভোক্তা পর্যায়ে এবং ৪০ টাকাতেই দেওয়া হবে। ভারত থেকে আনা এই পেঁয়াজের মান ভালো এবং তা ১০ থেকে ১৫ দিন সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এই ট্রাকসেলটা কিন্তু ওপেন। এটা কার্ডধারীরাও পাবে, অন্যরা নিতে পারবে। আমরা দুই কেজি করে বলেছিলাম, এখন আড়াই কেজি করে এক একজন ভোক্তা নিতে পারবে। এভাবে ধীরে ধীরে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে আশা প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পুলিশ দিয়ে না, সরবরাহ তৈরি করেই আমরা দাম কমাব। এটা কিন্তু আজকে প্রমাণিত।
যদি আমরা বিকল্প সরবরাহ ঠিক রাখতে পারি, বাজারে চাইলেও দুই-চারজন বাজার ব্যবস্থাকে নষ্ট করতে পারবে না। আমরা আমাদের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুধু পেঁয়াজ না, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের টিসিবির মাধ্যমে আমরা বাফার স্টক তৈরি করব।