মো. কাজিম উদ্দিন
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ বিমার আওতায়। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিমার অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ। উন্নত বিশ্বে এই হার শতভাগের কাছাকাছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের জিডিপিতেও বিমার অবদান ৪ দশমিক ২ শতাংশ। নেপাল, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশেও এ হার বেশ সন্তোষজনক।
অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশের বিমা খাত পিছিয়ে থাকার বড় কারণ গ্রাহকের আস্থা ও সচেতনতার অভাব। এই বাস্তবতায় আজ জাতীয় বিমা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে জনকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ খাতের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাজিম উদ্দিন।
প্রশ্ন : সদ্য প্রবর্তিত ব্যাংকাস্যুরেন্সের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন?
মো. কাজিম উদ্দিন : বাংলাদেশে ব্যাংকাস্যুরেন্সের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রবর্তন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে বিমা জনগণের কাছে আরও সহজলভ্য হবে ও জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা সুবিধা সম্প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু এই ১০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে বিমার আওতায় আছে ১ কোটিরও কম। আশা করছি ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে বিমার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং বিমায় পেনিট্রেশন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে বিমা গ্র্রহণের হার প্রায় ৫৫% এবং এজেন্সি এবং অন্যান্য চ্যানেলের মাধ্যমে বিমা গ্রহণের হার প্রায় ৪৫%।
শুধুমাত্র ভারতের এসবিআই লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০২২ সালের তাদের অর্জিত মোট প্রিমিয়াম ২৯,৫৯০ কোটি রুপির মধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্সের মাধ্যমে আয় করেছে ১৭,৮৩০ কোটি রুপি, যা তাদের মোট প্রিমিয়ামের ৬০%। আমরাও সার্বিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাংকাস্যুরেন্সকে এগিয়ে নিতে পারলে আমাদেরও বিপুল প্রিমিয়াম আয় সম্ভব হবে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৃহৎদাকারভাবে ভূমিকা রাখবে।
প্রশ্ন বিমা দাবি পরিশোধ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন উল্লেখ করুন?
মো. কাজিম উদ্দিন ঃ বিমা দিবসের অন্যতম উদ্দেশ্য বিমা দাবি পরিশোধকে উৎসাহিত করা। বিমা দাবি পরিশোধে শুধু যে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক লাভবান হন তা নয়, বরং এতে পুরো বিমা খাত লাভবান হয়। সঠিক সময়ে বিমা দাবি পরিশোধ করা হলে বিমার প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও আস্থা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ জন্য কোম্পানিগুলোকে মেয়াদ পূর্তির পরই দ্রুত বিমা দাবি পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।
পদ্ধতিগত কার্যক্রমের নামে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। দাবির চেক প্রদানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা গেলে বিমা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর হবে এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে, যা নতুন গ্রাহক সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ন্যাশনাল লাইফ ২০২৩ সালে ১০৯৩ কোটি টাকা দাবি পরিশোধ করে। ফলশ্রুতিতে ২০২৩ সালে আমরা সর্বমোট ১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রশ্ন : সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী আপনার প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট মোট বিক্রিত পলিসির সংখ্যা, গ্রাহকের সংখ্যা, পরিশোধিত দাবির সংখ্যা ও টাকার পরিমাণ, দাবি নিষ্পত্তির হার, লাইফ ফান্ড, বর্তমান বিনিয়োগ কত?
মো. কাজিম উদ্দিন : ২০২৩ সাল শেষে ন্যাশনাল লাইফের বিক্রিত বিমা পলিসির সংখ্যা ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩০, সর্বমোট প্রিমিয়াম অর্জিত হয়েছে ১৬ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা, লাইফ ফান্ড ৫ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা, বিনিয়োগ রয়েছে ৫ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা এবং মোট সম্পদ ৬ হাজার ০৪১ কোটি টাকা। তাছাড়া ২০২৩ সালে সর্বমোট দাবি পরিশোধ করা হয় ৯ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা।
আমাদের লাইফ ফান্ডের ৯৫ শতাংশই সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ৩৮% সহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা আছে। কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় ও গ্রাহকের দাবি পরিশোধের সক্ষমতা বজায় রাখতে গত ৩৯ বছর ধরে লাইফ ফান্ডের টাকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। অতীতে ন্যাশনাল লাইফে কখনো আর্থিক সংকট দেখা দেয়নি, ভবিষ্যতেও এমন সম্ভাবনা নেই। প্রতিবছরে লাইফ ফান্ড উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ জন্য ন্যাশনাল লাইফ আজ সুদৃঢ় আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।