সম্প্রতি বিটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিসিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন
সকল জটিলতা ও ষড়যন্ত্র কাটিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখল বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ফাইভ-জি রেডিনেস প্রকল্প। সবধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এবং দরপত্রের নিয়ম মেনে এ প্রকল্পে সরঞ্জাম সরবরাহের কাজ পেয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। সম্প্রতি এ লক্ষ্যে বিটিসিএলের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে হুয়াওয়ে। এর ফলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ফাইভ-জি রেডিনেস প্রকল্পের অংশীদার হলো হুয়াওয়ে। একটি কুচক্রী মহলের সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে এ প্রকল্পের কাজ পেল প্রতিষ্ঠানটি। এতে সরকারের অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় ১৩৭ কোটি টাকা কমে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করবে হুয়াওয়ে।
সরকারি দরপত্র অনুযায়ী, আর্থিক প্রস্তাব উন্মোচন এবং নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) বা কার্যাদেশ দেয়ার পর সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে চুক্তিসংক্রান্ত সকল কার্য সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ কোনো সময় উল্লেখ করা নেই। যেহেতু আগেই দরপত্রের কারিগরি সব মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়, এ কারণে আর্থিক প্রস্তাব উন্মোচনের খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই দরপত্রের আর্থিক মূল্যায়নের সকল কাজ শেষ করতে সক্ষম হয় সংশ্লিষ্টরা।
আর্থিক মূল্যায়ন অনুমোদন পাওয়ার পর ১৩ নভেম্বর বিটিসিএলের পরিচালনা পর্ষদের ২১৬তম সভায় হুয়াওয়ের ক্রয় প্রস্তাবটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠানের সঙ্গে মূল্যায়নের কাজ সম্পন্নের কোনো সম্পর্ক নেই। মূল্যায়ন কমিটি বিধি অনুযায়ী মূল্যায়ন সম্পন্নপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন। যেহেতু মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের পর পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়, তাই এ বিষয়টি সেখানে উপস্থাপিত হয় এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে হুয়াওয়েকে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) বা কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সকল ধরনের নিময়কানুন অনুসরণ করে ১৯ নভেম্বর হুয়াওয়ের সঙ্গে সরঞ্জাম সরবরাহের চুক্তি করে বিটিসিএল। এতে বিটিসিএলের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক মনজির আহম্মেদ (বানান চেক, চুক্তির ডকুমেন্ট সরবরাহ)। অন্যদিকে হুয়াওয়ের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন হুয়াওয়ে ইন্টারন্যাশনালের বিজনেস ডিরেক্টর চেন-শি ও হুয়াওয়ে টেকনোলোশিস বাংলাদেশের চিফ অপারেটিং অফিসার হু-ইওয়ি। বিটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ চুক্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিসিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আনোয়ার হোসেন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সঞ্জিব কুমার ঘটক, ডিএমডি মো. আনসার আলী ও ডিএমডি মো. জিয়াদুল আনাম, হুয়াওয়ে ইন্টারন্যাশনালের সলিউশন ম্যানেজার শিয়াও লংগ্যাং এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট ডিরেক্টর গো উয়ো ও অ্যাকাউন্ট রেসপন্সিবল মঈনুল হাসানসহ উভয়পক্ষের ঊচ্চপদস্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে ফাইভজি চালুর জন্য ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে হাতে নেওয়া হয় ‘ফাইভ-জি রেডিনেস’ প্রকল্প। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এতে সরঞ্জাম কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয় ৪৬৩ কোটি টাকা। সরঞ্জাম সরবরাহে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে দরপত্রের প্রি-বিডিং মিটিং হয়। পরে সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী গঠিত তিন সদস্যের দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্রটি উন্মুক্ত করে।
দরপত্রে প্রস্তাব দাখিল করে তিনটি কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিস লিমিটেড, জেডটিই করপোরেশন এবং নকিয়া সলিউশন। কারিগরি মূল্যায়ন ও আইনি জটিলতাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গেল ৮ নভেম্বর প্রকল্পের দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব উন্মোচন করা হয়। কারিগরি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হওয়া তিনটি কোম্পানির মধ্যে সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে ৩২৬ কোটি টাকা দরপ্রস্তাব করে হুয়াওয়ে। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী অন্য দুটি কোম্পানির মধ্যে জেডটিই ৪১৫ কোটি টাকা ও নকিয়া ৫৭৯ কোটি টাকা দরপ্রস্তাব করে। যদিও এ প্রকল্পে সরকারের অনুমোদিত ৪৬৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে সরকারের অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় ১৩৭ কোটি টাকা বা ৩০ শতাংশ কম দরপ্রস্তাব করে হুয়াওয়ে। যার পুরোটাই সরকারের সাশ্রয় হবে।
এ বিষয়ে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট রেসপন্সিবল মঈনুল হাসান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হুয়াওয়ে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ২০৪১ সালের যে ভিশন সরকার নিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করতে আমরা ফাইভ-জি রেডিনেস প্রকল্পে বৈশ্বিকভাবে ব্যবহৃত উন্নতমানের প্রযুক্তি সরবরাহ করব। যদিও এ প্রকল্পের শুরু থেকেই একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বানসহ প্রকল্প পিছিয়ে নেওয়ার সব ধরনের চেষ্টা করেছে। তবে কারিগরি মূল্যয়ন কমিটি, বিটিসিএলের বিওডিসহ সব পক্ষ থেকে মূল্যয়ন করার পরই আমরা কাজ পেয়েছি।