ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডেসটিনির আদলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা

ভূয়া এনআইডি দিয়ে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি!

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ২১:২২, ৭ ডিসেম্বর ২০২২

ভূয়া এনআইডি দিয়ে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি!

প্রতারক আবুল কালাম আজাদ ও মতিয়ার রহমান

বিভিন্ন নামে তৈরি করা হতো জাতীয় পরিচয়পত্র। এরপর ভুয়া এনআইডি দিয়ে অন্যের জমি রেজিস্ট্রেশন করা হতো। ব্যাংকে সেই জমির দলিল বন্ধক রেখে নেয়া হতো বড় অঙ্কের ঋণ। এভাবেই ব্যাংকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তি। কখনও মামুনুল হাসান, আবার কখনও হায়দার হোসেন নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ৬৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় মামলা করেছে একাধিক ব্যাংক। 

শুধু ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণা নয়, ডেসটিনির আদলে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের অন্তত ৩০ জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। তার এসব প্রতারণার অন্যতম সহযোগি মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধেও এনআইডি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদ ২০০৮ সালে প্রথম প্রতারণা করে ব্যাংক ঋণ বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক থেকে। ওই সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সত্ত্বাধীকারী মামুনুল হাসান নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার কাগজপত্র, মালিকানা দাবিকৃত জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই ও মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। 

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব কাগজপত্র সঠিক আছে মর্মে প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যাংক মামুনুল হাসান ৬০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করে। যা দুইটি চেকের মাধ্যমে তিনি ব্যাংক থেকে তুলে নেন। এর কয়েকদিন পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মামুনুল হাসান ও তার ঘনিষ্ঠ লোকজন হিসেবে পরিচিত সবার মোবাইল ফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। মামুনুল হাসানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদনান ট্রেডিং তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এক পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানতে পারে প্রতারণার ঘটনা।

জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে তিনি মামুনুল হাসান নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করেছেন। যা দিয়ে তিনি জনৈক মামুনুল হাসানের জমি রেজিস্ট্রেশন করে ব্যাংকে মর্টগেজ রেখেছেন। এ প্রতারকের প্রকৃত নাম আবুল কালাম আজাদ। এনআইডি কার্ডে তার পিতা-মাতার নাম ও যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে তা-ও ভুয়া। 

এমনকি ব্যাংকের গ্যারান্টার হিসেবে যাদের এনআইডি জমা দেওয়া হয়েছে তাও ভুয়া। আজাদের প্রতারণার অন্যতম সহযোগি মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি ও ব্যাংক লোন নেওয়া সম্ভব না। এর সঙ্গে সব বিভাগেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত।  

এদিকে পল্টন থানায় দায়েরকৃত সিটি ব্যাংকের এজাহারে দেখা গেছে, একই ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে আবুল কালাম আজাদ নামধারী মামুনুল হাসান ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। সেখানেও ব্যবসায়ী হিসেবে আদনান ট্রেডিং, ৪১/২ পুরানা পল্টন প্রতিষ্ঠানটি দেখানো হয়েছে। বুধবার মামলায় উল্লেখিত ঠিকানায় গিয়ে এ ধরণের কোন কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এদিকে মর্টগেজ হিসেবে প্রতারক চক্র এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে জমা দেওয়া একই জমির কাগজ দেখিয়েছে। এখানে ব্যাংকের গ্যারান্টার হিসেবে আলাদা একজনের নাম ব্যবহার করা হলেও তার জমা দেওয়া এনআইডিটিও ভুয়া। 

এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উত্তরা শাখা থেকে গাজীপুরে কালিগঞ্জ মৌজার ৫০ শতাংশ জমি বন্ধক দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। শুধু ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণাই নয়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেসটিনির আদলে ২০২০ সালে সাজ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন আবুল কালাম আজাদ। 

কোম্পানির নামে দেশজুড়ে শতাধিক ডিলার নিয়োগ দেন। এরপর কমিশনের টোপ দিয়ে ডিলারদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন। এভাবে অন্তত ৩০ জেলার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎত করেন আবুল কালাম আজাদ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, অল্প দিনেই কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমার কাছ থেকে কয়েক দফায় ৪০ লাখ টাকা নেন আজাদ। দ্বাারে দ্বারে ঘুরেও আমি সেই টাকা পাইনি। এই প্রতারক চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এই ব্যবসায়ী। 

এ বিষয়ে জানতে আবুল কালাম আজাদ ও মতিয়ার রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বুধবার রাজধানীর বাড্ডায় সাজ প্লাস্টিকের অফিসে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
 

রহিম শেখ

সম্পর্কিত বিষয়:

×