
মহাসাগরের বিশাল ঢেউয়ের মাঝে আচমকা পানির নিচ থেকে উঠে আসে একটি কালো ছায়া। নিঃশব্দে সমুদ্রের গভীরে এগিয়ে চলে জার্মান সাবমেরিন ইউবোর্ড। ক্যাপ্টেন টেরিস্কোপের মাধ্যমে দূরদৃষ্টি দিয়ে লক্ষ্য রাখছেন। হঠাৎ দেখা যায়, দূরে একটি বিশাল ব্রিটিশ জাহাজ। কয়েক মুহূর্ত পর ক্যাপ্টেনের নির্দেশে টরপেডো ছুটে যায় লক্ষ্যের দিকে এবং বিস্ফোরণের তীব্রতায় জাহাজটি মুহূর্তেই সমুদ্রগর্ভে চলে যায়। আবার কয়েক মিনিট পর ফিরে আসে নীরব অন্ধকার। ইউবোর্ড নিঃশব্দে হারিয়ে যায় পানির গভীরে। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিন বিশ্বের নৌযুদ্ধের ধারণা বদলে দেয়।
কিন্তু সাবমেরিনের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ১৬ শতকে ইংল্যান্ডের গণিতবিদ উইলিয়াম বর্ন প্রথম সম্পূর্ণ ডুবন্ত নৌকার পরিকল্পনা করেছিলেন, যদিও তা কেবল কাগজেই ছিল। ১৬২০সালে ডাচ উদ্ভাবক কর্নেলিয়াস ড্রেবেল প্রথম সফল সাবমেরিন তৈরি করেন, যা কাঠের তৈরি ছিল এবং পানির নিচে বেশ কিছু ঘণ্টা চলতে পারত। এরপর ১৭৭৬সালে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে সাবমেরিন প্রথম সামরিক অভিযানে অংশ নেয়।
এরপর ১৯ শতকে রবার্ট ফল্টন তামা দিয়ে মোরানো শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরি করেন। তবে ১৮৬৪ সালে হ্যাচেল হানলি নামের একটি সাবমেরিন শত্রু জাহাজ ডুবিয়ে প্রথমবার সাবমেরিনকে যুদ্ধের জগতে স্থায়ী জায়গা দেয়। এরপর ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের বিপ্লব আসে ১৯০৫ সালে, যখন ফরাসি নৌবাহিনী প্রথম ডিজেল চালিত সাবমেরিন তৈরি করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ইউবোর্ড মহাসাগরে আতঙ্ক ছড়ায় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার কার্যকলাপ শত্রুদের জন্য ভয়াবহ হয়ে ওঠে।
পরবর্তীতে, ১৯৫৪ সালে পারমাণবিক সাবমেরিন ইউএসএস নোটিলাস চালু হয়ে একটি নতুন যুগের সূচনা করে, যা প্রতিপক্ষের মধ্যে গভীর প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। ১৯৬০ সালে ক্রিয়েস্টে নামক সাবমেরিন পৃথিবীর গভীরতম স্থানে পৌঁছানোর নজির সৃষ্টি করে। এছাড়া, বর্তমানে রোবট সাবমেরিনও তৈরি হয়েছে, যা সমুদ্রের তলদেশে খনিজ সম্পদ এবং হারানো জাহাজ খুঁজে বের করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।
আজকের সাবমেরিন প্রযুক্তি এতটাই উন্নত যে এটি শুধুমাত্র যুদ্ধের জন্য নয়, বরং সমুদ্রের গভীরে গবেষণার জন্যও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী এবং উন্নত সাবমেরিন সম্ভবত নতুন ধরনের শক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হবে, যা সমুদ্রের অজানা রহস্যের সন্ধানে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
সূত্র : https://www.youtube.com/watch?v=WErX609lOdI
রাজু