ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

রাশিয়ায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে সতর্কতা

প্রকাশিত: ০০:২৩, ৩১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:২৪, ৩১ জুলাই ২০২৫

রাশিয়ায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে সতর্কতা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে। বুধবার (৩০ জুলাই) ভোরে ৮.৮ মাত্রার এই ভূকম্পনে সৃষ্ট সুনামি ঢেউ আছড়ে পড়ে জাপান, হাওয়াইসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলগুলোতে। এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর না মিললেও উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সতর্কতা জারি রয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝুঁকি ২৪ ঘণ্টার বেশি সময়ও থাকতে পারে। পরবর্তী সময়ে প্রায় সব দেশ ও অঞ্চল সুনামিসম্পর্কিত সতর্কতা প্রত্যাহার করলেও কোথাও কোথাও বহাল রাখা হয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত

গতকালের ভূমিকম্পে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় কামচাতকা উপদ্বীপের বন্দরগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে এবং বাসিন্দারা তড়িঘড়ি করে নিরাপদ স্থানে সরে যান। জাপানের উত্তরাঞ্চলে সাদা ফেনা মাখানো বিশাল ঢেউ উপকূল পর্যন্ত এসে পৌঁছায়। হাওয়াইয়ের রাজধানী হনুলুলুতে রাস্তাজুড়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়, এমনকি উপকূল থেকে দূরের এলাকাতেও যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

ছবি: সংগৃহীত

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানে বিপদপূর্ণ এলাকাগুলোর মানুষদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে এবার দেশটির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়নি।

রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু মানুষ আহত হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানায়নি। জাপানে অন্তত একজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

কামচাতকায় ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল ৩ থেকে ৪ মিটার (১০–১৩ ফুট), জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে ৬০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২ ফুট), আর আলাস্কার আলেউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে জোয়ারের চেয়ে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার উঁচু ঢেউ দেখা গেছে।

‘একটি সুনামি মানে একবারের ঢেউ নয়, এটা একের পর এক শক্তিশালী ঢেউয়ের একটি সিরিজ, যেগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমুদ্র তটভাগে আছড়ে পড়ে’, বলেছেন আলাস্কার ন্যাশনাল সুনামি ওয়ার্নিং সেন্টারের সমন্বয়কারী ডেভ স্নাইডার।

তিনি আরও বলেন, ‘সমুদ্রের গভীর পানিতে এগুলো জেট বিমানের গতিতে ছুটে চলে, কিন্তু উপকূলের কাছাকাছি এসে গতি কমে যায় এবং তখনই সেগুলো বিপজ্জনক রূপ ধারণ করে।’

হাওয়াইয়ের গভর্নর জোশ গ্রিন জানান, হাওয়াই ও জাপানের মাঝামাঝি মিডওয়ে অ্যাটল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে ঢেউয়ের উচ্চতা সর্বোচ্চ ৬ ফুট পর্যন্ত পৌঁছায়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (longitudinal wave), যা সমুদ্রের ওপর দিয়ে ভূমির ভেতরে প্রবেশ করে।’ হেলিকপ্টার এবং উচ্চ-নৈযান প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধার অভিযানের জন্য।

ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন এবং কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশেও সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে ৩০ সেন্টিমিটারের নিচে ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। প্রথমে ৮.০ মাত্রা বলা হলেও পরে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS) তা ৮.৮ মাত্রা হিসেবে নিশ্চিত করে। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল রাশিয়ার পেত্রোপাভলোভস্ক-কামচাতস্কি শহর থেকে ১১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং গভীরতা ছিল ২০.৭ কিলোমিটার।

এই শহরটির জনসংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার। মূল ভূমিকম্পের পর ৬.৯ মাত্রার একাধিক আফটারশক (ভূমিকম্পের পরে হওয়া ছোট আকারের কম্পন) অনুভূত হয়।

সেভেরোকুরিলস্ক শহরের মেয়র জানান, বন্দরে পানি ঢুকে পড়ে এবং মাছ ধরার নৌকা সাগরে ভেসে যায়, তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং নিরাপত্তার জন্য গ্রিড পরীক্ষা করা হচ্ছে।

এই ভূমিকম্পটি সম্ভবত ২০১১ সালের জাপানের ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘটনা, যা তৎকালীন সময়ে সুনামির মাধ্যমে পারমাণবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল।

জাপানে ফেরি, ট্রেন ও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। হোক্কাইডোর হামানাকা শহরে ৬০ সেন্টিমিটার এবং ইওয়াতের কুজি বন্দরে সমান উচ্চতার ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে। টোকিও উপসাগরে ৫ ঘণ্টা পর ২০ সেন্টিমিটার ঢেউ দেখা যায়।

মাতসুশিমা শহরে শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। একজন বলেন, ‘২০১১ সালের অভিজ্ঞতা থেকেই দেরি না করে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছি।’ জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, ‘সুনামি দেরিতে হলেও থাকতে পারে, তাই সবাইকে দীর্ঘ সময় প্রস্তুত থাকতে হবে।’

ফুকুশিমা দাইইচি প্ল্যান্টে ৪,০০০ কর্মী পাহাড়ি উঁচু স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন এবং দূর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

ফিলিপাইন, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, ফিজি, সামোয়া, টোঙ্গা, মাইক্রোনেশিয়া এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জেও সতর্কতা জারি হয়েছিল। উল্লেখ্য, জুলাই মাসের শুরুতেও কামচাতকার উপকূলে ৭.৪ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পসহ পাঁচটি ভূমিকম্প হয়েছিল।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×