ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ভারতকে পাশ কাটিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে তেলচুক্তি ট্রাম্পের, কী বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্র?

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ৩১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:৩৬, ৩১ জুলাই ২০২৫

ভারতকে পাশ কাটিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে তেলচুক্তি ট্রাম্পের, কী বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্র?

ছবি: সংগৃহীত

“বন্ধু” ভারতকে ২৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের ঘোষণা ও রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও তেল কেনার কারণে অতিরিক্ত শাস্তির কথা বলার পর, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানালেন—যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তি করেছে, যার মধ্যে দেশটির “বিশাল” তেলসম্পদ উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ভারত তা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে তেল কিনে চলায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প বলেন—“হয়তো পাকিস্তান ওদের (ভারতকে) তেল বিক্রি করবে।”

নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে ট্রাম্প পরোক্ষভাবে ভারত ও চীনকে রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থায়নের জন্য দায়ী করেন। এক সময় যিনি দাবি করেছিলেন, শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এ যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারবেন, এখন তার কণ্ঠে ক্ষোভ।

এ সময় তিনি ভারতীয় অর্থনীতিকেও আক্রমণ করেন। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিকে ট্রাম্প “মৃত” বলে মন্তব্য করেন, কারণ ভারত তার দুগ্ধ ও কৃষিপণ্য বাজার খুলে দিতে রাজি হয়নি।

অন্যদিকে, পাকিস্তান শুক্রবার সকালে জানায়—এই চুক্তির ফলে তাদের ওপর আরোপিত প্রতিশোধমূলক শুল্ক কমবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে। তবে ঠিক কত শতাংশ শুল্ক হ্রাস পাবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয় আলোচনার সুযোগ দিতে।

যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান তেলচুক্তি আসলে কী?

এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের “বিশাল” তেলসম্পদ উন্নয়নে সাহায্য করবে।

যদিও এর বিস্তারিত এখনও পরিষ্কার নয়, ট্রাম্পের পোস্টের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্যভাবে কোনো একটি মার্কিন কোম্পানিকে পাকিস্তানে খনিজ তেল উত্তোলনের অধিকার দেওয়া হতে পারে।

ভারতের জন্য এর অর্থ কী?

এটা এখনও অস্পষ্ট।

২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতের প্রমাণিত তেল মজুত ছিল প্রায় ৪.৮ বিলিয়ন ব্যারেল, যা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। ভারতের গভীর সমুদ্রে খনিজ উত্তোলনের সক্ষমতাও রয়েছে, যা পাকিস্তানের নেই।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির হিসাব অনুযায়ী ভারত প্রতিদিন ৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করে, যেখানে পাকিস্তান করে মাত্র ৬৮ হাজার ব্যারেল। তবে উভয় দেশকেই ব্যাপকভাবে তেল আমদানি করতে হয়—ভারতকে আরও বেশি, কারণ তার বাজার অনেক বড়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে। তুলনামূলকভাবে, পাকিস্তান এ সময়ে গড়ে দৈনিক মাত্র ১.৪ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (IEA) পূর্বাভাস বলছে, চলতি বছর ভারতের দৈনিক চাহিদা আরও ৩.৩ লাখ ব্যারেল বাড়বে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এই চাহিদা ৩ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যাবে।

এ পরিসংখ্যান বলছে—পাকিস্তানের অনিশ্চিত তেলমজুত উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করলেও তা ভারতের জন্য বাস্তবিকভাবে খুব বড় কোনো হুমকি নয়।

যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতকে চাপ দিচ্ছে?

পাকিস্তানের তেলসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করলে দেশটি কিছুটা সাশ্রয়ী হতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি মূলত রাজনৈতিক কৌশল।

যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত যেন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে এবং মার্কিন তেল কিনতে বাধ্য হয়।

চলতি বছরের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলে ভারত তেল ও গ্যাস আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়—যার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু শুল্ক ছাড় পাওয়ার আশাও ছিল।

এই চুক্তি ভারতের জন্য অর্থবহ ছিল, কারণ এতে রাশিয়া ও ইরানের ওপর নির্ভরতা কমানোর সুযোগ ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষির পথও খুলে যায়।

তবুও রাশিয়া এখনও ভারতের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী দেশগুলোর একটি—এ বিষয়েই ট্রাম্পের বিরক্তি।

পাকিস্তানকে সহায়তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ভারতকে বার্তা দিচ্ছে—“যুক্তরাষ্ট্রের পথ না ধরলে তোমার প্রতিপক্ষকে আমরা মজবুত করব।”

যদিও ট্রাম্পের কটাক্ষ—“পাকিস্তান হয়তো ভারতকে তেল বিক্রি করবে”—বাস্তবে খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রথমত, পাকিস্তানের প্রমাণিত তেল মজুত ভারতকে আকৃষ্ট করার মতো নয়। দ্বিতীয়ত, ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক এমন পর্যায়ে নেই যে তেল কেনাবেচা সম্ভব।

তবে দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান জ্বালানি সম্পর্ক গড়ে উঠলে ভারতের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাশ্রয়ী দামে তেল কেনা কঠিন হতে পারে, যা তাদের আমদানি বৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলবে।

আবির

×