ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

২০২৫ সালে মাথাপিছু জিডিপি অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী যেসব দেশ

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:৫৮, ২৮ মে ২০২৫

২০২৫ সালে মাথাপিছু জিডিপি অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ধনী যেসব দেশ

ছ‌বি: সংগৃহীত

২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)- এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে কিছু ছোট কিন্তু কৌশলগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ রাষ্ট্র। মাথাপিছু জিডিপি (PPP) অনুযায়ী প্রস্তুত করা এই তালিকাটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, একটি দেশের ভূখণ্ডের আয়তন নয়— বরং অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সুপরিকল্পিত নীতি এবং সুশাসনের গুণগত মানই হচ্ছে প্রকৃত সমৃদ্ধির মাপকাঠি।

তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। একসময়কার একটি সাধারণ বন্দরনগরী আজ পরিণত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কেন্দ্রে। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কৌশলগত অবস্থান— এই তিনটি স্তম্ভে দাঁড়িয়ে সিঙ্গাপুর মাথাপিছু $১৫৬,৭৬০ জিডিপি নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করেছে।

অল্প ব্যবধানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লুক্সেমবার্গ, যার মাথাপিছু জিডিপি $১৫২,৯২০। ইউরোপের ক্ষুদ্র এই দেশটি মূলত ব্যাংকিং, বিনিয়োগ এবং স্টিল শিল্পের উপর নির্ভর করে গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল অর্থনীতি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ম্যাকাও, চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল, মূলত জুয়া ও পর্যটন খাত থেকে অর্থনৈতিক গতি পেলেও বর্তমানে তারা আর্থিক পরিষেবা ও সাংস্কৃতিক পর্যটনের দিকে বৈচিত্র্য আনছে। মাথাপিছু জিডিপি $১৩৪,০৪০ হওয়ায় এটি এখন বিশ্বের অন্যতম ধনী অঞ্চল।

চতুর্থ স্থানে রয়েছে আয়ারল্যান্ড, যেখানে প্রযুক্তি জায়ান্টদের ইউরোপীয় সদরদপ্তর গড়ে উঠেছে স্বল্প কর হার এবং দক্ষ জনশক্তির কারণে। পঞ্চম স্থানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনকুবের রাষ্ট্র কাতার। বিশাল প্রাকৃতিক গ্যাস রিজার্ভকে ঘিরে কাতার গড়ে তুলেছে অবকাঠামো, শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর এক আধুনিক রাষ্ট্র।

তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে নরওয়ে, যাদের তেলের রাজস্ব থেকে গঠিত সার্বভৌম তহবিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ। তারা নবায়নযোগ্য শক্তির দিকেও গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ করেছে। সপ্তম স্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, যার অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠিত হয়েছে ব্যাংকিং, উচ্চমূল্যের উৎপাদন এবং নিরপেক্ষ কূটনৈতিক অবস্থানের মাধ্যমে।

অষ্টম স্থানে থাকা ব্রুনেই তার তেল ও গ্যাস সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এখন ইসলামি ফাইন্যান্স, হালাল খাদ্য এবং ইকো-ট্যুরিজমে বিনিয়োগ করছে। একেবারে নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে দক্ষিণ আমেরিকার গায়ানা, যার সাম্প্রতিক তেল আবিষ্কার দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তন এনেছে এবং এক ধাক্কায় তাকে নবম স্থানে নিয়ে এসেছে।

তালিকার দশম এবং শেষ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও আকারে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি, তবে মাথাপিছু জিডিপির হিসেবে এ বছর তারা পেছনের সারিতে। প্রযুক্তি, ফিনান্স, কৃষি ও বিনোদনসহ বহু খাতের বৈচিত্র্যপূর্ণ অবদান যুক্তরাষ্ট্রকে এই অবস্থানে রেখেছে।

এই তালিকাটি আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে— ধনসম্পদের আসল ভিত্তি হল সঠিক দিকনির্দেশনা, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং সুসংগঠিত নীতিনির্ধারণ। কেউ প্রাকৃতিক সম্পদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, আবার কেউ উদ্ভাবনী শক্তিকে পুঁজি করে পৌঁছেছে অভাবনীয় সমৃদ্ধিতে। ফলে আজকের বিশ্বে ধনী হওয়ার জন্য শুধু বড় ভূখণ্ড নয়, প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা, স্থিরতা এবং কৌশলের সঠিক প্রয়োগ।

তাই কেউ যদি বলে, “টাকায় সুখ নেই”, তখন নিঃসন্দেহে বলা যায়— এই দেশগুলো যেন সেই কথার ব্যতিক্রমই প্রমাণ করছে।

মেহেদী

×