ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ চৈত্র ১৪৩২

শীতকালের সবজি গ্রীষ্মকালে আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ১৪ মে ২০২৫

শীতকালের সবজি গ্রীষ্মকালে আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা

.

বগুড়ায় শস্য আবাদে কৃষকরা নিজস্ব স্বকীয়তায় বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে আবাদের আর্থিক ক্ষেত্র শক্তিশালী করছে। ভালো লাভের কারণে শীতকালীন সবজি এখন গ্রীষ্মকালে চাষের দিকে ঝুঁকছেন এলাকার কৃষকরা। এ কারণে একদিকে যেমন আবাদে বৈচিত্র্যতা ও বহুমুখিতা সৃষ্টি করছে আবার তেমনি লোকসানের ঝুঁকি থেকে কৃষকরা বেরিয়ে আসছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শীতকালীন সবজি হিসাবে অতি পরিচিত ফুলকপি এখন বগুড়াতে গ্রীষ্মকালীন বা খরিপ মৌসুমে আবাদ শুরু করছেন কৃষকরা। শুধু ফুলকপি নয়, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, লাউসহ আরও কিছু শীতকালীন সবজি এখন গ্রীষ্ম মৌসুমেও আবাদ হচ্ছে। এর ফলে রবি মৌসুমের সঙ্গে খরিপ মৌসুমের সবজির পার্থক্য কমে আসছে। তবে বিঘাপ্রতি উৎপদান ও মানের তারতম্য থাকলেও সাধারণ গ্রীষ্মকালীন ফসলের সঙ্গে এই গরম ও বৃষ্টি মৌসুমেও শীতের সবজির সরবরাহ থাকায় গ্রীষ্মকালেও শীতের সবজির স্বাদ মিলছে। কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা এখন বারোমাসি সবজির দিকে বেশি ঝুঁকছেন।
বগুড়ার লাহেরীর পাড়ার সাত শিমুলিয়া গ্রামের শুভ মোহন্ত একান্নবর্তী পরিবার। দুই ভাই এক সঙ্গে থাকেন। চাষাবাদও এক সঙ্গে। মার্চ মাসে ৬ বিঘা জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছিলেন। বিঘা প্রতি কপি ফলন হয়েছে ৫৭/৬০ মণ। গত সপ্তাহে মহাস্থান হাটে বিক্রি করেছেন কপি। কয়েক দফায় কপি প্রতিমণ বিক্রি করেছেন ৪৩শ’ থেকে ৪৮শ’ টাকা দরে। এখন অবশ্য দাম কমেছে। তিনি জানান, কপির ভর মৌসুম শীতকালে এর সর্বোচ্চ দাম ছিল ২২শ’ টাকা। জানালেন প্রতি বিঘায় প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন একই জমিতে বরবটি আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এলাকার কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল কিবরিয়া জানান, শীতকাল বা রবি মৌসুমে কপির সর্বনিম্ন দর দেড়শ’ টাকায় নেমেছিল। আর এখন উচ্চ মূল্যের কারণে কৃষক গ্রীষ্মকালে কপি আবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে। ২ বছর আগেও তিনি নিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় কোনো কৃষককে শীতের সবজি গ্রীষ্মে আবাদ করতে দেখেননি। তার ধারণা শীতকালের মতো গ্রীষ্মকালেও কপি আবাদ আরও বাড়বে। কৃষক শুভ মোহন্ত জানালেন, এ বছর মিলিয়ে তিনি দু’বার গ্রীষ্মকালে ফুলকপি আবাদ করলেন। প্রথম বছর ১ বিঘা জমিতে আর এ বছর তাদের পারিবারিক ৬ বিঘা জমিতে  ফুলকপি চাষ করেছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাহপুর বটতলা এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক শীত মৌসুমে মোট ৫ বিঘা জমিতে কপি আবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে ২ বিঘা জমির কপি ১৮ থেকে ২২শ’ টাকায় বিক্রি করলেও অন্য ৩ বিঘা জমির কপি ওই সময় তার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, তখন বাজারে দাম ছিল না। শেষমেষ ১ থেকে ২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়েছে। তাই এখন গ্রীষ্মকালে কপির বীজ পেয়ে আবাদ করছেন। এবারই গ্রীষ্মকালে প্রথম তিনি কপি আবাদ করছেন। মোট ৫০ শতক জমিতে বেশ ভালো ফলনই হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজি গ্রীষ্মকালে আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও গাবতলি উপজেলায় কিছুটা বেশি। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত খরিপ-১ বা গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে বগুড়ায় শীতকালীন সবজি ফুলকপি আবাদ হয়েছে ৩৫ হেক্টর জমিতে। মুলা আবাদ হয়েছে ১৫শ’ হেক্টর ও শিম ৬০ হেক্টর ও লাউ ১৮০ হেক্টর জমিতে। গ্রীষ্মকালে আরেক ফসলি মৌসুম খরিপ-২ এসব সবজির আবাদ আরও বাড়বে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এসবই শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। তবে এখন সব মৌসুমেই এই সবজিগুলো আবাদ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, এসব সবজি বগুড়া থেকে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ জানান, বগুড়াতে অফ সিজনের (শীতকালের সবজি গ্রীষ্মকাল) সবজির আবাদে কৃষকরা এখন আগ্রহী হচ্ছে মূলতঃ উচ্চমূল্য প্রাপ্তির কারণে। এতে কৃষি বিভাগ সহায়তা করছে। বীজের সহজলভ্যতাও কৃষকদের আগ্রহ বাড়াচ্ছে।

প্যানেল

×