ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাভাষ্য-কার্টুন প্রদর্শনী ‘পলিট্রিকস’

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৯ মার্চ ২০২৩

রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাভাষ্য-কার্টুন প্রদর্শনী ‘পলিট্রিকস’

ধানম-িতে ইএমকে সেন্টারে পলিট্রিকস শীর্ষক কার্টুন প্রদর্শনীতে ছবি দেখছেন এক দর্শনার্থী

আমজনতাকে সহজে আকৃষ্ট করা চারুশিল্পের এক অনন্য মাধ্যম কার্টুন। কারণ, কার্টুনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে সমাজ ও রাজনীতির। বিশেষ করে রাজনীতির অসঙ্গতি ও সংকটসহ সামাজিক ব্যাধি মেলে ধরতে জুড়ি নেই কার্টুনের। সেই সুবাদে বাংলাদেশের শিল্পীদের চিত্রিত রাজনৈতিক কার্টুনের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। তাই রাজনীতির নানা বাঁকে ও সময়ে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষায় পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক কার্টুন।

পাশাপাশি যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ থেকে সাধারণের ন্যায্য দাবি আদায়ের পক্ষে শিল্পমাধ্যমটি রেখেছে সোচ্চার ভূমিকা। শিল্পিত সেই প্রতিবাদী রূপটি ধারণ করেছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের খরস্রোতা সময়কে। সেই ধারাবাহিকতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল যৌক্তিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজনৈতিক কার্টুন হয়ে উঠেছে দ্রোহের উত্তাপময় স্বতন্ত্র এক কণ্ঠস্বর। আর রাজনৈতিক কার্টুনের সেই ইতিহাস পরম্পরার দেখা মেলে ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের ইএমকে সেন্টারে।

পলিট্রিকস শীর্ষক রাজনৈতিক কার্টুন প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয়েছে বায়ান্ন পেরুনো একাত্তর থেকে সমকালীন সময়ের বিবিধ বিষয়। দেশের প্রখ্যাত থেকে প্রবীণ ও নবীন কার্টুনিস্টদের আঁকা কার্টুনে সজ্জিত হয়েছে এই শিল্পায়োজন। রাজনীতির ধারাভাষ্যময় প্রদর্শনীটির আয়োজক রম্য গ্যাগ সাইট ‘ই-আরকি’। প্রদর্শনীর সমান্তরালে নতুন প্রজন্মের কার্টুনিস্ট তৈরিতে কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। 
হাস্যরসের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ উপস্থাপনের সঙ্গে তীক্ষè রাজনৈতিক বক্তব্য উঠে এসেছে প্রদর্শনীতে ঠাঁইপ্রাপ্ত কার্টুনে। পত্রিকায় প্রকাশিত কার্টুনের সঙ্গে ক্যানভাসে চিত্রিত দীর্ঘকালের পুরনো থেকে সমকালীন নিত্য-নতুন কার্টুনের সংযোগ ঘটেছে এই শিল্পায়োজনে। প্রদর্শনালয়ের দেওয়ালজুড়ে ঝুলে থাকা সেসব কার্টুনের মাঝে নজর আটকে যায় একটি কার্টুনে। প্রশস্ত চিত্রপটে পাখা মেলে উড়ছেন সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

শিল্পিত ক্যারিকেচারে ৩২ পাটি দাঁত বের করে এক চোখ বুঁজে হাসছেন এরশাদ। দৃশ্যমান ব্যঙ্গাত্মক অভিব্যক্তি। হাস্যকর সেই মুখচ্ছবির সঙ্গে তার শরীরে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে মৌমাছির অবয়ব। মধু শিকারি নামের কার্টুনটি এঁকেছেন সাদাতউদ্দিন আহমেদ জামিল। এমন নানা কার্টুনে পরিশীলিত বিদ্রƒপের আশ্রয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য রাজনীতিবিদ থেকে রাজনৈতিক ঘটনাবলি। 
বুধবার প্রদর্শনীর শেষ দিনে সমবেত হয়েছিলেন অসংখ্য শিল্পরসিক দর্শক। তাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জাকিয়া বারী মম। গভীর আগ্রহে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রদর্শনীর কার্টুনগুলো অবলোকন করছিলেন এই অভিনেত্রী। শিল্পায়োজনটি প্রসঙ্গে এই অভিনয় শিল্পী বলেন, এই প্রদর্শনীটি দেখে মুগ্ধ হলাম। কারণ, এখানে কেবল কার্টুন নয় সেই সঙ্গে দেখছি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পরম্পরা। কার্টুনের সূত্র ধরে সামনে আসছে অনেক না বলা কথা।

কোনো আলোচিত ঘটনার কথা হয়তো কোনো একদিন পত্রিকায় পড়ার পর ভুলে যাই অথচ সেই সংবাদের নেপথ্যে অনেক প্রশ্ন রয়ে যায়। সমস্যার সূত্র ধরে রয়েছে অব্যক্ত কথা। এখানে প্রদর্শিত দেশের প্রখ্যাত থেকে প্রবীণ কার্টুনিস্টদের আঁকা কার্টুনগুলোয় সেই অপ্রকাশিত কথার প্রকাশ ঘটেছে।   
সোমবার সূচনা হওয়া প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল বুধবার। ১৪৫টি কার্টুনের সম্মিলন ঘটেছে অগ্রজদের সঙ্গে নতুনের কাজের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার এ আয়োজনে। বর্ণাঢ্য শিল্পায়োজনটিতে দর্শকরা দেখতে পেয়েছেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কাজী আবুল কাসেমের আঁকা কার্টুন। ঠাঁই পেয়েছিল কামরুল হাসান, রফিকুন নবী, শিশির ভট্টাচার্য্য, শাহরিয়ার খান, আসিফুল হুদা, আহসান হাবীব, নজরুল ইসলাম, বিপুল শাহ, শাহানারা নার্গিস, মোর্শেদ মিশু, আরাফাত করিমের মতো কয়েক প্রজন্মের শিল্পীর আঁকা কার্টুন।

×