ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ব্যাপকভাবে ফুটেছে বাগান বিলাস

হালকা গোলাপি রঙের ফুল, বদলে দিয়েছে শহরের চেহারা 

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২২:২২, ১৮ মার্চ ২০২৩

হালকা গোলাপি রঙের  ফুল, বদলে দিয়েছে  শহরের চেহারা 

রাজধানীর একটি ভবনের গেটে অপরূপ রূপে ধরা দিয়েছে বাগান বিলাস

দেশে তো বটেই, একবার মালদ্বীপে দেখেছিলাম বাগান বিলাস। কী সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র! এর মূল আকর্ষণ নীল জলরাশি। কণ্ঠহার থেকে ছিটকে পড়া মুক্তো দানার মতো এক একটি দ্বীপ। দ্বীপ ঘিরে থাকা অথৈ জল পর্যটকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। কিন্তু স্থলভাগে দেখার তেমন কিছু নেই। একদিন খুব ভোরে হোটেল থেকে বের হয়ে অকারণ হাঁটাহাঁটি করছিলাম। জায়গাটির নাম হুলহুমালে। ফুটপাত ঘেঁষা একটি দ্বিতল ভবনের সামনে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেল।

সাদা কাঠের ফ্রেম দিয়ে ঘেরা গ্লাস ডোর। এর ঠিক ওপরে হাল্কা গোলাপি রঙের বাগান বিলাস। বার বার দেখা ফুল এখানে দেখে মনে হলো, নতুন দেখছি। কারণ ব্যাপকভাগে ফুটেছিল এই ফুল। অজস্র ফুল ওপর দিকে এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছিল যে, ভবনের প্রধান ফটকটিকে মনে হচ্ছিল বড় কোনো ফুলদানী! সবুজ পাতা আর ঘন হয়ে ফোটা বাগান বিলাসের অভ্যর্থনা কোনো দিন ভোলার মতো নয়। মালদ্বীপের স্থলভাগে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমার চোখে সত্যি সেবার পড়েনি। পৃথিবীর আরও বহু দেশে আছে বাগান বিলাস। আর বাংলাদেশে তো আছেই। বিশেষ করে এখন যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই ব্যাপকভাবে বাগান বিলাস ফুটে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

বাঁশ বা লোহার তৈরি অর্ধচন্দ্রাকৃতির গেটে লতানো গাছ কোনো রকমে তুলে দিলেই হলো। দেখতে দেখতে মূল কাঠামো ঢেকে যায়। ফুল আর ফুল দেখা যায় শুধু। বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় হয়ত আরও অনেক ফুল ফুটে আছে। কিন্তু অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর কাজটি বাগানবিলাসই করে থাকে। যখন ফুল  ফোটে, এই যেমন এখন, শুধু তো গেট নয়, গোটা বাড়ির চেহারা বদলে গেছে। বহিরাঙ্গন দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখ সরিয়ে নেবেন, সম্ভব নয়।

অনেকে টবের নরম মাটিতে খুঁটি গেড়ে মাচা তৈরি করে দিয়েছেন। মাচার উপরে বৃত্তাকার অংশটি ফুলে ফুলে ভরে আছে এখন। পাশাপাশি শহর ঢাকার রমনাপার্ক, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন বাগানে বিশাল জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে আছে বাগানবিলাস। রাজধানী শহরের কোনো কোনো সড়ক বিভাজকের ওপর সৌন্দর্য বিলাচ্ছে বাগান বিলাস। এমনকি ফুটওভারব্রিজের পাশে ঝুলন্ত টবে গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেখানেও ফুলের সমারোহ।

বাগান বিলাস নাম হলেও, এটি ঠিক বাগানের ফুল নয়। বরং বাগান বিলাস নিজেই এক একটি বাগানের মতো। লতা পাতা ফুলসহ যেখানে দৃশ্যমান হয় সেখানেই যেন বাগানের  চেহারা। গাছটি প্রচুর জায়গাজুড়ে থাকে। কখনো কখনো ঝোপঝাড়ের মতো দেখায়। এর যত পাতা তত ফুল। ঘ্রাণ নেই। তবু রঙিন ফুলে চোখ আটকে যায়। মুগ্ধ করে রাখে।

বাগান বিলাসের ইংরেজি নাম বোগেনভেলিয়া। প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি  দেওয়া প্রথম ফরাসী নাবিক লুইস এ্যানিত্দয়োন বোগেনভিলের নামে এই ফুলের নামকরণ করা হয়। ১৮ শতকে ব্রাজিলে প্রথমবারের মতো ফুলটি দেখতে পান তিনি। বাগানবিলাস ঘুপঃধমরহধ পবধব পরিবারভুক্ত। আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা অনুযায়ী, মেরিপামার স্পেক্টাবিলিস জাত দুটি দেশে বেশি দেখা যায়। কোনটিতে তিনটি পাপড়ি থাকে। কোনটিতে তিনের অধিক। ফুলের পাপড়ি পাতলা রঙিন কাগজের মতো। তাই কাগজি ফুল নামেও ডাকা হয় এটিকে। দেশে হালকা গোলাপি রঙের বাগান বিলাসই বেশি  চোখে পড়ে। পাশাপাশি আছে সাদা হলুদ কমলা রঙের বাগান বিলাস। যত দূর জানা যায়, এখন পর্যন্ত ফুলটির প্রায় ৩শ জাত আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে এত তো আর গুনে বের করা যাবে না। যা ধারে কাছে আছে তাই দেখুন। উপভোগ করুন। দারুণ একটা সময় কিন্তু এখন। 

×