ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো শুরু হলো

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বইয়ের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো শুরু হলো

এক বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা। বুধবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল

এক বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা। বুধবার সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে যথারীতি শুরু হয়ে গেল অমর একুশে বইমেলা। শুধু তো বইয়ের মেলা নয়, বাঙালির এটি প্রাণের মেলা। সারা বছর কেউ বই পড়েন। কেউ পড়েন না। কেউ হয়তো ‘পড়ি’ ‘পড়ব’ করেই সময় কাটিয়ে দেন। তবে একুশের মেলা সেই তাদের মনেই অদ্ভুত এক পুলক সৃষ্টি করে। মাসব্যাপী আয়োজনে একেবারে ডুবে থাকেন সবাই। নতুন নতুন বই আসে মেলায়। কেউ লেখেন, কেউ প্রকাশ করেন। আর পাঠক ব্যস্ত থাকেন বই সংগ্রহে।

এভাবে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের বাৎসরিক মিলনমেলায় পরিণত হয় বইমেলা। অবশ্য করোনাকালে গত দুই বছর কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছিল। মেলা আয়োজন করা হলেও, এ নিয়ে শঙ্কা সংশয় রয়ে গিয়েছিল। সেদিক থেকে দেখলে এবার যথেষ্ট সুসময়ে মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। মহামারির পর এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত হন বাংলা একাডেমিতে। বর্ধমান হাউস সংলগ্ন মঞ্চ থেকে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সেইসঙ্গে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন তিনি।

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কবিতা- ফারুক মাহমুদ, তারিক সুজাত, কথাসাহিত্য- তাপস মজুমদার, পারভেজ হোসেন, প্রবন্ধ/গবেষণা- মাসুদুজ্জামান, অনুবাদ- আলম খোরশেদ, নাটক- মিলন কান্তি দে, ফরিদ আহমদ দুলাল, শিশুসাহিত্য- ধ্রুব এষ, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা- মুহাম্মদ শামসুল হক, বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গবেষণাÑ সুভাষ সিংহ রায়, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞান- মোকারম হোসেন, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনি- ইকতিয়ার চৌধুরী, ফোকলোরÑ আবদুল খালেক, মুহম্মদ আবদুল জলিল। 
একাডেমির ৭ নতুন বই ॥ মেলার প্রথম দিন বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে ৭টি নতুন বই। মেলা মঞ্চে বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইগুলো দিয়েই, বলা চলে, মেলার নতুন বইয়ের আলোচনা শুরু হলো। মেলার প্রথম দিন প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী।’ বঙ্গবন্ধুর লেখা নিয়ে প্রকাশিত তিনটি বই এই রচনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। এবার প্রথম খ- পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হলো।

পাশাপাশি বাঙালির নেতার বইগুলোর পাঠ বিশ্লেষণ নিয়ে নতুন তিনটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। শিরোনাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী- পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘আমার দেখা নয়াচীন- পাঠ বিশ্লেষণ’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা- পাঠ বিশ্লেষণ।’ আগেও বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বইগুলোর পাঠ বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির পাঠ বিশ্লেষণ আরও সমৃদ্ধ হবে, সে আশা আমরা রাখব বৈকি। একই তালিকায় রয়েছে বরেণ্য কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’-এর ইংরেজি অনুবাদ ‘দ্য লেটার অব সাবিত্রী।’ আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জীবনী গ্রন্থের কথা।

‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ শিরোনামে প্রকাশিত বইয়ের প্রথম খ- পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মেলার শুরুতেই। আবদুল হামিদের জীবন নিয়ে সাধারণ মানুষের আছে বিপুল কৌতূহল। তিনি নিজেই এই কৌতূহলের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর খোলামেলা কথা ও সরল জীবন বইয়ের পাতায় কতটা উঠে এলো? নিশ্চয়ই তা জানার চেষ্টা করবেন। সবগুলো বই বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। 
উদ্যানে পা রাখতেই ভিন্ন ছবি ॥ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের ছবিটা বরাবরের মতোই পরিপাটি ছিল। প্রধানমন্ত্রী চত্বরে বেশ কিছু সময় অবস্থান করে বই সংগ্রহ করেছেন। তবে মূল মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সন্ধ্যার কিছু আগে সে উদ্যান খুলে দেওয়া হয়। ঠিক তখনই ভিন্ন ছবি চোখে পড়ে। অব্যবস্থাপনার এ বছর যেন রেকর্ড গড়ল বাংলা একাডেমি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পা রাখতেই চোখে পড়ল ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নির্মাণসামগ্রী। ভাঙা ইট, বাঁশের চটি, কাঠের টুকরা, ককশিট ইত্যাদির কারণে ঠিকমতো হাঁটা যাচ্ছিল না।

পাঞ্জেরী, প্রথমা, আগামী, মাওলা, শ্রাবণ, পাঠক সমাবেশসহ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছতে রীতিমতো আবর্জনার পাহাড় ডিঙাতে হয়েছে। প্রথম দিন। তাই বলে এমন চেহারা? মেলার কদাকার চেহারা ভীষণই হতাশার জন্ম দিয়েছে। একাডেমির এই তাহলে রুচি? প্রশ্ন তুলেছেন প্রথম দিন মেলায় আসা অনেকেই। আজ কী হবে? কতটা গুছিয়ে নিতে পারবে একাডেমি? 
প্রকাশকদের সঙ্গে দেখা ॥ প্রথম দিন হলেও, মেলায় এসেছিলেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামীর কর্ণধার ওসমান গনি, কথা প্রকাশের কর্ণধার জসিম উদ্দিন, তা¤্রলিপির কর্ণধার এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনিসহ অনেকের সঙ্গেই এদিন দেখা হয়েছে। তাদের প্রায় সকলেই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। বলেছেন, পরিচ্ছন্নতার কাজটি তো বাংলা একাডেমি করবে। শেষ মুহূর্তে বরাদ্দ দেওয়ায় আমাদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ শেষ করতে বেগ পেতে হয়েছে। পরিচ্ছন্নতার কাজ করার সুযোগ ছিল না। এ প্রসঙ্গে কথা বললে, একাডেমি ‘রাগ’ করে বলেও জানান ওসমান গনি।  
মেলার বিন্যাস ॥ এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠান বই প্রদর্শন ও বিক্রি করছে। মেলায় প্রকশনা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মোট সংখ্যা ৬০১টি। এ ছাড়াও আছে ৩৮টি প্যাভিলিয়ন। লিটলম্যাগ চত্বরে ১৫৩টি স্টল প্রস্তুত করা হয়েছে।

এবার বাংলা একাডেমি প্রান্ত থেকে মেলায় প্রবেশ করতে রমনা কালি মন্দিরের গেটটি ব্যবহার করা হচ্ছে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে, টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে আরও ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ রাখা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে কোনো স্টল নেই। শিশু চত্বরটি মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে রাখা হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করছে। 
৩টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দ্বার খোলা ॥ মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, মেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে।

×