ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিনে ৮ ডিসেম্বর চারুকলার বকুলতলায় নাচ-গানসহ নানা আয়োজনে আবৃত্তি শিল্পী হাসান আরিফকে স্মরণ করা হয়

পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ধুন্দুমার কা- বেঁধে গেল। গত বুধবারের কথা। দলের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন। রাজনীতির জন্য গরম খবর বৈকি। বলা যায়, ‘খেলা’ মোটামুটি জমে উঠেছে। কিন্তু ঢাকাবাসীর শান্তি সুখের কী হবে? গত কয়েক বছর তো বেশ ভালোই কাটল। সামনে কী আছে? আদৌ ভালো কিছু আশা করা যাবে? নাকি, ফিরতে হবে সেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দিনগুলোতেই? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর আগেও রাজনীতির নামে এই শহরে বহু মারামারি হয়েছে।

গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাদানে গ্যাস, লাঠিপেটা কম তো দেখা হয়নি। এমনকি, মানুষ  পুড়িয়ে মারার নিষ্ঠুর খেলাও খেলেছেন রাজনীতির লোকেরা। বিএনপি- জামায়াতের ডাকা হরতাল অবরোধের দিনগুলোর কথা মনে পড়লে ভয়ে ভেতর কেঁপে ওঠে। একেবারে নিরীহ নির্দোষ মানুষের ওপর অবলীলায় পেট্রোল বোমা ছোড়া হচ্ছিল।

ভরপুর প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষ আর ঘরে ফিরতে পারেননি। হাসপাতালে শুয়ে ছটফট করেছে। ছটফট করতে করতে কত মানুষের প্রাণ গেল! রাজনীতির দুর্বৃত্তরা মানুষ পুড়িয়ে তাদের আন্দোলনের শক্তি ও তীব্রতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অপরাধমূলক কর্মকা-ের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেওয়া। আবারও সে লক্ষ্য সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। এরই মাঝে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সঙ্গত কারণেই তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তৎপরতা নিয়ে মাথাব্যথা নেই সাধারণ নাগরিকদের। অপতৎপরতা নিয়ে আছ অজানা শঙ্কা। সব দেখে মনে হচ্ছে শঙ্কা বাড়ানোর ব্যাপারেই বেশি আগ্রহ রাজনীতিবিদদের। বিএনপির পক্ষ থেকে  কিছুদিন আগে একটি উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। এই নেত্রী সরকারে নেই। সংসদে নেই।

উপরন্তু একাধিক মামলার আসামি হিসেবে চার দেওয়ালের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমান উল্লাহ আমানের দেওয়া ওই বক্তব্যের কী অর্থ? সরকার ও আওয়ামী লীগ অর্থ খুঁজতে নেমে যায়। নেতারা অভিযোগ করেন, বিএনপি-জামায়াত ১০ ডিসেম্বর জনসভার নামে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করতে চায় আবার। তাদের ঠেকানোর প্রাথমিক পর্যায়ে বুধবার পুলিশ পল্টনের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।

সরিয়ে দিতে গিয়েই বাধে গ-গুল এবং এই গ-গোলের মর্মান্তিক শিকার হয়েছেন অতি সাধারণ এক নাগরিক। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল না তার। অথচ প্রাণ দিতে হলো! আরও কি যাবে প্রাণ? আবারও কি আতঙ্কের জনপদ হবে ঢাকা? রাজনীতির লোকদের কথা বাদ, সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। এখনই এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করা জরুরি। সবার পক্ষ থেকে এ দাবি আমরা জানিয়ে রাখলাম।      
জন্মদিনে হাসান আরিফকে স্মরণ ॥ কী যে অবেলায় চলে গেলেন হাসান আরিফ! কয়েক মাস গত হয়েছে। তার চলে যাওয়া এখনো মেনে নিতে পারেননি প্রাণের সুহৃদ বন্ধু ও স্বজনরা। নানা ভাব ও ভাষায় তারা প্রিয়জন হারানোর শোক প্রকাশ করছিলেন। আর তার পর চলে এলো হাসান আরিফের জন্মের প্রথম শুভ ক্ষণ।

দেশবরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী ও সংগঠক ৮ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একই দিনে বৃহস্পতিবার বিপুল ভালোবাসায় শ্রদ্ধায় গভীর আবেগে তাকে স্মরণ করা হয়। দিনটি উপলক্ষে চারুকলার বকুলতলায় বিকেলে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তার ভক্ত-অনুরাগীরা। সবুজ খোলা চত্বরে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল আবৃত্তি শিল্পীদের। এর বাইরে সংগীত, নৃত্য, নাটকসহ প্রায় সব মাধ্যমের শিল্পীরা ভেতরের তাগিদ থেকে এসেছিলেন।

আর মঞ্চের ব্যাকড্রপে সেই চিরচেনা মন ভোলানো হাসিমাখা মুখ- হাসান আরিফ। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যেই নিবেদন করা হলো কবিতা-গান-নাচ। শিল্পের বিচিত্র মাধ্যমে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হলো তাকে। সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার কথা বলতে এসেছিলেন জোটের বর্তমান নেতারাও। শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনরাও প্রিয় আরিফের কথা বলেছেন। সিনিয়র-জুনিয়র সবার বেলায়, অভিব্যক্তিতে নতুন এক উজ্জীবন ঘটেছিল তার। হাসান আরিফ যে মৃত্যুতে শেষ হওয়ার নয়, যেন সে বার্তাই দিল তার নামে গড়ে তোলা স্মৃতি সংসদ।

×