ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আছে অনেক প্রশ্ন, উত্তর জানা নেই

সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্ট্যাচু নিয়ে কৌতূহল

সমুদ্র হক

প্রকাশিত: ০১:২৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্ট্যাচু নিয়ে কৌতূহল

এ্যাওয়ার্ড পার্কে ব্রিটিশ সম্রাট সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্ট্যাচু

প্রতিদিন হাজারও মানুষ বগুড়ার এ্যাডওয়ার্ড পার্কে ঘুরতে যায়গাছগাছালি পাখপাখালির মধ্যে ছোট্ট একটি উন্মুক্ত খুপরিতে ব্রিটিশ রাজকীয় ইতিহাসের এক সম্রাট পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেভ্রমণার্থীরা তাকে দেখেজানতে চায় না কে তিনিগোল পাথরের স্তম্ভে তার নাম লেখা আছে এম্পেরর এ্যাডওয়ার্ড দ্য সেভেনতারপর কোথাও তার ছোট্ট হলেও কোন পরিচিতি নেইবর্তমান প্রজন্মের অনেকেই (এবং অনেক প্রবীণ ও মধ্যবয়সী) জানেন না কিভাবে তিনি স্ট্যাচু হয়ে এলেনকেনই বা পার্কের নাম এ্যাডওয়ার্ড হলোএ্যাডওয়ার্ড কি বগুড়া এসেছিলেনঅনেকগুলো প্রশ্ন জড়ো হয়কেউ উত্তর খুঁজে পায় না

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিহত হওয়ার পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (ব্রিটিশ) দখল করে নেয় এই উপমহাদেশতারপর এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় ব্রিটিশদের হাতেসেই ব্রিটিশদেরই এক স¤্র্রাট এই এ্যাডওয়ার্ডমূল নামের সঙ্গে এ্যাডওয়ার্ড যুক্ত নামে আটজন স¤্র্রাট ছিলেনএই সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের শ্বেত পাথরের স্ট্যাচু শুধু বগুড়ায় তার নামের পার্কে আছে (খোঁজখবর করে জানা যায় দেশের অন্য কোথাও তার এমন স্ট্যাচু নেই)

ব্রিটিশ মহারানী ভিক্টোরিয়ার (এলিজাবেথের আগে) ছেলে এমপেরর (স¤্র্রাট) আলবার্ট এ্যাডওয়ার্ডতার ডাক নাম বিরটিকেন তিনি সেভেনথ এ্যাডওয়ার্ড হলেন তার ইতিহাস অস্পষ্টতবে স¤্র্রাট অষ্টম এ্যাডওয়ার্ডের চমকপ্রদ প্রেমের ইতিহাস অনেকের জানাবিশ্বে একমাত্র এই স¤্র্রাট প্রেমের জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেনঅষ্টম এ্যাডওয়ার্ড ভালবেসেছিলেন লেডি সিম্পসনকেপ্রণয়ের খবর জানলেন মহারানী ভিক্টোরিয়াসিম্পসন রাজ পরিবারের ছিলেন নাযে কারণে রানী ভিক্টোরিয়া অষ্টম এ্যাডওয়ার্ডের প্রণয় মেনে না নিয়ে দুটি অপশন দেন১. বিয়ে করলে সিংহাসন ত্যাগ করতে হবে২. বিয়ে না করলে সিংহাসন বহাল থাকবেঅষ্টম এ্যাডওয়ার্ড প্রথমটি (সিংহাসন ত্যাগ) বেছে নেনসেই থেকে প্রেমের জন্য সিংহাসন ত্যাগ সারাবিশ্বে উদাহারণ হয়ে আছেসপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের ভাগ্যে একটি প্রণয় ছিলতবে তিনি সেই প্রণয় ত্যাগ করে তার চাচাতো বোনকে বিয়ে করেনতার পরিচিতি প্রিন্সেস অব আলেকজান্ড্রা অব ডেনমার্কসপ্তম এ্যাওয়ার্ডের জন্ম বাকিংহাম প্যালেসে ১৮৪১ সালের ৯ নবেম্বরতিনি মারা যান ১৯১০ সালেএই সময়ের মধ্যে সপ্তম এ্যাডওয়ার্ড ব্রিটিশ নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীতেও ছিলেনসপ্তম এ্যাডওয়ার্ড অষ্টম এ্যাডওয়ার্ডের মতো সিংহাসন লোভী ছিলেন নাতিনি বিশ্বময় ঘুরে বেরিয়েছেন১৯০১ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়া মারা যাওয়ার পর একই বছর ২২ জানুয়ারি স¤্র্রাটের আসনে বসতে হয় সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডকেতিনি ছিলেন উদারপন্থীব্রিটিশ রক্ত শরীরে থাকার পরও তিনি ব্রিটিশ শাসনের কলোনিয়াল প্রথার অনেক কিছুই মেনে নিতে পারেননিএজন্য পরবর্তী মহারানীদের সঙ্গে তার বিরোধ হয়তারপরও সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডকে সবকিছু মানতে বাধ্য করা হয়¤্র্রাট হওয়ার আগে সপ্তম এ্যাডওয়ার্ড ছিলেন প্রিন্স অব গোথা সেক্সকোবার্গ ও প্রিন্স অব ওয়েলস

¤্র্রাটের সিংহাসনে আসন গ্রহণ করার পর তার অধীনে চলে আসে যুক্তরাজ্য (ইউকে) গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডতিনি ভারতবর্ষ ঘুরে দেখেনওই সময়ে বগুড়া অঞ্চলে তিনি এসেছিলেন কিনা তা জানা যায়নিতবে তার মা মহারানী ভিক্টোরিয়া এই অঞ্চলে এসেছিলেনতার নামে বগুড়ার একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আছেবগুড়া নগরীর সার্কিট হাউসের বিপরীতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (ভিএম) গার্লস স্কুল বর্তমানে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়লোকমুখে এখনও এই স্কুলের নাম ভিএম স্কুলসেই হিসাব কষে বলা যায় সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্বল্প সময়ের জন্য বগুড়ায় আগমন বিচিত্র নয়কারণ সপ্তম এ্যাডওয়ার্ড ভ্রমণ পিপাসু ছিলেন

বিতর্কের এই অধ্যায় বাদ দিয়ে এ্যাডওয়ার্ড পার্কের বিষয়ে জানা যায় বগুড়ার নওয়াব পরিবারের নবাব আলতাফ আলী এই পার্কের জন্য ৯ দশমিক ৬৬ একর ভূমি দান করেনবিষয়টি জানালেন বগুড়ার পৌরসভার সাবেক মেয়র এ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমানতিনি বলেন নওয়াব আলতাফ আলী ও তার ছেলে মোহাম্মদ আলী (তকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী) বগুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন বগুড়ার সৌন্দর্য বাড়াতে পার্কে অনেক কিছুই স্থাপন করেনযেমন বগুড়ার ওই পার্কে স্থাপিত হয় ঘুর্নায়মান রঙ্গমঞ্চএই ঘুর্নায়মান রঙ্গমঞ্চ ছিল কলকাতার পরই বগুড়ায়নওয়াব আলতাফ আলী ও মোহাম্মদ আলী ছিলেন ব্রিটিশ শাসনামলের ভারতবর্ষের ১৪টি রাজ্যের একটির লেজেসলেটিভ (আইনপ্রণেতা)জনশ্রুতি আছে নওয়াব আলতাফ আলীর সঙ্গে স¤্র্রাট এ্যাওয়ার্ডের আলাপ পরিচয় ছিলতিনি (নওয়াব আলতাফ আলী) সিদ্ধান্ত নেন বগুড়ার পার্কটি স¤্র্রাট সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের নামেই হবে এবং স¤্র্রাটের একটি শ্বেত পাথরের স্ট্যাচু পার্কে স্থাপিত হবেএই স্ট্যাচু কলকাতা থেকে বানিয়ে আনা হয়সেই থেকে স্ট্যাচুটি এ্যাডওয়ার্ড পার্কে আছে

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্ট্যাচুটি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করেছিলপারেনিদেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর এ্যাডওয়ার্ড পার্কে সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের স্ট্যাচুটি পুনর্স্থাপিত হয়যে স্ট্যাচু এখনও অনেকের কৌতূহলের বিষয়

×