ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইইইউর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২২

ইইইউর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য

বাংলাদেশ এবার মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে যাচ্ছে ইউরেশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়নের সঙ্গে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালের মে মাসে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। ইইইউভুক্ত পাঁচটি দেশ হলোÑ রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, আর্মেনিয়া ও কিরগিজস্থান। বর্তমানে এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫০ কোটি ডলারের বেশি। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হলে এর পরিমাণ বাড়বে বহুগুণ। ইতোমধ্যে ১৯টি খাত চিহ্নিত করে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজও শুরু করেছে ওয়ার্কিং গ্রুপ। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম বৈঠক। এসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, ওষুধ, আলু ও সবজি রফতানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সার্কভুক্ত ৮টি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিধায় ইইইউভুক্ত দেশগুলো স্থানীয় বিপুল বাজার ধরার জন্য শিল্প কারখানা স্থাপন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে লাভবান হতে পারবে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হলে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর করে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, ইলেক্ট্রনিকসহ ১০০টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে ভুটানে। অন্যদিকে ভুটান থেকে পাথর, বোল্ডার, ফলমূলসহ ৩৪টি পণ্য একই সুবিধা পাবে বাংলাদেশে। আগামীতে অবশ্য এই তালিকায় আরও পণ্য সংযুক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ রকম শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চুক্তির জন্য বাংলাদেশের আলোচনা চলছে আরও ১১টি দেশের সঙ্গে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নীত হবে উন্নয়নশীল দেশে। যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। ফলে বর্তমানে এলডিসি হিসেবে যেসব বাণিজ্য সুবিধা এখন বাংলাদেশ পাচ্ছে, তা কিছুটা হলেও কমবে। সেই প্রেক্ষাপটে ভুটানের সঙ্গে প্রথম যে পিটিএ স্বাক্ষর হয়েছে, তা একটি বড় অর্থনৈতিক অর্জন। আপাতত বাণিজ্য ভারসাম্য ভুটানের অনুকূলে থাকলেও উভয় দেশের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর এবার শুরু হচ্ছে বিবিআইএন কার্যক্রম। এ তালিকায় ভুটান সংযুক্ত হলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়বে নিঃসন্দেহে। পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির আওতায় যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকাঠামো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বহুলাংশে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত ইতোমধ্যে নেপালে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। অনুরূপ হতে পারে ভুটানেও। প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্তমানে যেসব ইস্যু বাধা হিসেবে কাজ করছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে মূলত অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুগমতার সঙ্কট। এসব সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণ এবং পর্যালোচনা করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
×