ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গৌরবদীপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২১

গৌরবদীপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি আত্মনির্ভর জাতিসত্তার বিকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে আজ থেকে এক শ’ বছর আগে আত্মপ্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অসাধারণ শিক্ষক ও মানসম্পন্ন পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে এটি হয়ে ওঠে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলের মানুষের অধিকার আদায়ের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত নানা সমস্যা ও সঙ্কট পেরিয়ে এ প্রতিষ্ঠান এ দেশের মানুষের সামনে খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। সাফল্যের সঙ্গেই আজ এই বিশ্ববিদ্যালয় পার করছে প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বেশ ক’জন গুণীজন তাৎপর্যপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তার বিশেষ পরামর্শ হলো তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে হবে। শুরুর দিকে জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান ও সামাজিক গবেষণা, পাঠদানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অগ্রণী। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিকদের বড় অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ দেশের সব গণআন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভূমিকা ছিল অসামান্য। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধা স্বদেশ ত্যাগ করেছে। এর অন্যতম কারণ মেধার অবমূল্যায়ন। ফলে যাদের শিক্ষক হওয়ার কথা তাদের অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ভর করে শিক্ষকদের ওপর। মেধাবী শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে তাদের গবেষণার পথ উন্মুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। ঊনবিংশ শতকের ব্রিটিশ সাহিত্যিক ও রাজনীতিক বেঞ্জামিন ডিজরেইলি বর্ণিত আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামঞ্জস্য রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় ‘ট্রিপল এল’ নিশ্চিত করবে- লাইট, লিবার্টি এ্যান্ড লার্নিং। আলো, মুক্তি ও শিক্ষা- এই তিন ক্ষেত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেখেছে অনন্য ভূমিকা। জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের গৌরবগাথা নিয়ে শতবর্ষ পাড়ি দিয়েছে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোভিড-১৯ আক্রান্ত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। শিক্ষার গুণগতমান ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং গবেষণার পরিধি সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়নও করা হয়েছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনগুলোয় শিক্ষাবিস্তার ও জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা এবং বিবিধ গবেষণায় উত্তরোত্তর উন্নতির মাধ্যমে এশিয়া তথা বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশী শিক্ষার্থীরাও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট ও শিক্ষার্জনের জন্য আগ্রহী হবে। সৃষ্টিশীল ও মেধাবী শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব দেবেন। আর তাদের নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে যে সব শিক্ষার্থী এখান থেকে উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করবেন তারা নেতৃত্ব দেবেন দেশ পরিচালনায়। এভাবেই দেশের মুখ উজ্জ্বলতর হবে। আমরা পাব প্রত্যাশিত সত্যিকারের সোনার বাংলা।
×