ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়া দশমী

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৫ অক্টোবর ২০২১

বিজয়া দশমী

আজ বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের। অশ্রæসজল নয়নে ভক্তকুল দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন। সনাতন ধর্ম মতে, আজ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার সমাপন ঘটবে আজ। পঞ্জিকামতে, এবার দেবী এসেছেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চড়ে। শাস্ত্রমতে-ফলম্-ছত্রভমান্তরঙ্গমে। সব কিছু ছত্রভঙ্গ, লণ্ডভণ্ড। আর দেবী কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন দোলায় চড়ে। শাস্ত্রমতে-দোলায়ং মড়কং ভবেৎ। ভক্তকুলের জন্য এ দুটোই অস্বস্তির কারণ। তবু জগৎজননী মা প্রকৃতি ও মানবকুলকে আলোকিত করে যাবেন। আগামী শরতে দেবী ফিরে আসবেন- এমন প্রত্যাশা নিয়েই মাকে বিদায় জানাবেন তার ভক্তরা। মানবধরা আজ মহামারী করোনার কোপানলে। এক মহাসঙ্কটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে বিশ^। এই বৈশ্বিক মহামারী থেকে মুক্তি লাভই ভক্তের প্রার্থনা। অন্যদিকে ধর্ষক নামধারী কিছু মানুষের মধ্যে ভর করেছে পশুত্ব। মানুষরূপী ধর্ষকদের হিং¯্রতা বর্বর অসুরদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব সঙ্কটে জগৎমাতা দেবীদুর্গার সুদৃষ্টি সর্বাগ্রে প্রয়োজন। মায়ের আশীর্বাদ পর্যবসিত হোক এই বসুন্ধরায়। দূর হোক অন্ধকার, ছড়িয়ে পড়ুক আলো। মানুষের মাঝে উদয় হোক শুভবুদ্ধি। বিরাজ করুক শান্তির সুবাতাস। ভক্তকুলের শেষ আশ্রয় মা। সুখে-দুঃখে সব কিছুতেই জগৎমাতা দুর্গা। তাই মায়ের কাছে প্রার্থনা, সকল অশুভ শক্তিকে নিয়ে যাবেন তিনি। এমন প্রার্থনাই রইল আনন্দময়ীর কাছে। বাংলাদেশ বরাবরই ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক মিলনক্ষেত্র। সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন। ধর্ম যার যার উৎসব সবার- এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে দেশের মানুষের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারও পূজাকে সীমিতকরণ করা হলেও আনন্দঘন আবহের সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে। পূজায় এবার দেশের কোথাও তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সামাজিক সহিষ্ণুতা ও উদারতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের তীক্ষè নজরদারি এক্ষেত্রে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। অসুরকুলের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গা। সেই থেকে বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। এ জন্য দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা সার্বজনীন উৎসব। মানুষে মানুষে প্রীতি, প্রেম, সহিষ্ণুতা, ঐক্য ও শান্তির ডাক দিয়ে যায় ধর্ম। তারপরও অসুরের আকস্মিক উন্মত্ততা নষ্ট করে দেয় আবহমানকালের প্রীতিধন্য পারস্পরিক সহাবস্থানকে। ধ্বংস করে দেয় দীর্ঘকালের হৃদ্যতাকে। সৃষ্টি হয় বৈষম্য, বিভেদ, হিংসা, অন্যায় ও অকল্যাণ। আর এ জন্যই মঙ্গলদাত্রী দেবী দুর্গার আগমন ঘটে কল্যাণ ও শান্তি সংস্থাপন করার জন্য। তবে করোনামুক্ত পৃথিবী মায়ের কাছে এই মুহূর্তের প্রার্থনা। মা তার ভক্তকুলকে সকল অশক্তির হাত থেকে রক্ষা করবেন অতীতের মতো। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক। দূর হোক সব সঙ্কীর্ণতা ও বিভেদ- মা দুর্গা যেন সেই শক্তি, সৌহার্দ্য সবার হৃদয়ে ও মনে জাগ্রত করেন।
×