ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় প্লাজমা থেরাপি

প্রকাশিত: ২০:৪২, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

করোনায় প্লাজমা থেরাপি

করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের আরোগ্যের জন্য ব্লাড প্লাজমা বা রক্তরস দিয়ে চিকিৎসা নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি রয়েছে বিভিন্ন দেশে। উল্লেখ্য, রক্তের তরল হাল্কা হলুদাভ অংশকে রক্তরস বা ব্লাড প্লাজমা বলা হয়। রক্তের তিন ধরনের কণিকা ছাড়া বাকি অংশই অভিহিত রক্তরস হিসেবে, যা রক্তের প্রায় ৫৫ শতাংশ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেসব রোগী আরোগ্য লাভ করেন, তাদের শরীর থেকে রক্ত নিয়ে পৃথক করা হয় ব্লাড প্লাজমা। অতঃপর করোনা আক্রান্ত নতুন রোগীর দেহে শিরার মাধ্যমে এই রক্তরস দেয়া হলে তা ফলদায়ক হয়, অন্তত করোনায় তীব্র সংক্রমণ ঘটে না। আর্জেন্টিনার চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এই ইতিবাচক ফল পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনসহ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এমনকি বাংলাদেশেও মুমূষর্ূু করোনা রোগীকে ব্লাড প্লাজমা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়েছে রেমসিডিভির, হাইড্রোক্লোরোকুইন ইত্যাদি। তবে এর কোনটিই শেষ পর্যন্ত সুফলদায়ক নয় বলে নাকচ করে দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ইতোমধ্যে করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে। দেশে দেশে তার প্রয়োগও চলমান। বাংলাদেশেও আসছে অচিরেই। তবে সবার টিকা পেতে সময় লাগবে। বাংলাদেশেও স্থাপিত হয়েছ প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার। সরকারী-বেসরকারী কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় এটি কাজও শুরু করেছে ইতোমধ্যে। ৩৬ করোনা রোগীকে এই সেন্টারের মাধ্যমে প্লাজমা সরবরাহও করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে করোনাজয়ীদের কাছ থেকে ব্লাড প্লাজমা সংগ্রহ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, দেশে কয়েক লাখ করোনাজয়ী রয়েছেন বলে খবর আছে। সে অবস্থায় প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন নিঃসন্দেহে একটি আশা জাগানিয়া খবর। এই সেন্টারের মাধ্যমে ইতোমধ্যে করোনাজয়ীদের তথ্য সংগ্রহ করা, ডাটাবেজ তৈরি, দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে একটি যোগাযোগ তথা মেলবন্ধন তৈরির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। অবশ্য প্লাজমা থেরাপি করোনা রোগীকে শতভাগ সুস্থ করে তোলার ক্ষেত্রে নিশ্চিত গ্যারান্টি কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। সত্যি বলতে কি, করোনা নিরাময়ের জন্য প্রচলিত কোন চিকিৎসাই সুনিশ্চিত কার্যকর নয়। তবে প্লাজমা থেরাপিতে করোনা রোগীর উন্নতির একাধিক খবরও আছে। উল্লেখ্য, এই চিকিৎসা পদ্ধতি আদৌ নতুন নয়; বরং শতাব্দী প্রাচীন। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় যেমন ব্লাড প্ল্যাটিলেট লাগে, তেমনি করোনা রোগীর উপশমে প্লাজমা থেরোপি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এর পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে অন্তত ৭০টি হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা, এক হাজার হাই ফ্লো অক্সিজেন নেজাল ও ১০ হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার প্রচেষ্টা চলছে, যা করোনা রোগীর নিরাময়ের জন্য অতীব সহায়ক হবে। এই সুবিধা ধনী-গরিব নির্বিশেষে নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, ভ্যাকসিনও করোনা নিরাময়ের সুনিশ্চিত গ্যারান্টি নয়। সে অবস্থায় সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো অত্যাবশ্যক। নিয়মিত হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার, মাস্ক-গ্লাভস ব্যবহারসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সর্বোপরি সামাজিক দূরত্ব নীতি সর্বদাই মেনে চলতে হবে ঘরে ও বাইরে সর্বত্র। হাসপাতাল কিংবা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে যথাযথভাবে। জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন ও পরিহার করতে হবে। প্রয়োজন ব্যতিরেকে ঘরের বাইরে না বেরনোই ভাল। সর্বোপরি সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে প্রতিকূল পরিস্থিতি।
×