
আমার মৃত্যুর ক্ষণ
মনসুর আজিজ
আমার মৃত্যু কামনা করে আকাশের শকুন, কতগুলো পাতিকাক,
তীক্ষè নখরে মাংস খাবলে খাবে আয়েশ করে।
পাড়ার কুকুরটির হিস্যাও কম নয়, রাত-বিরাতের সঙ্গী
আমার মৃত্যুর অপেক্ষা করছে থানার দারোগা ও পুলিশ
ফরনেসিক বিভাগ, ডাক্তার, ডোম
প্রতিটি মানুষের জীবিকার হক রয়েছে আমার লাশের উপর
স্ত্রী হিসাবের খাতা খুলে রেখেছে নগদের আশায়;
প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্যোসাল সিকিউরিটি, ইনস্যুরেন্স,
অকাল মৃত্যুর বেনেফিটিসহ কত কী...
সম্পদের বাটোয়ারায় সন্তানরাও উদগ্রীব!
গোরখোদক থেকে মসজিদের ইমাম,
কবরের বাঁশ-চাটাইয়রে ব্যবসাদার
সাদা-থান, আতর-সাবানের কারবারিও আমার মত্যুর দিন গোনে
এতিমখানার শিশুরাও খুশি এবার;
অন্তত আকালের দিনে একটুকরো মাংস জুটবে পাতে!
আহা জীবিত থাকার চাইতে মৃত মানুষের মূল্য বেশি-
এ কী জানতাম আমি!
প্রিয়জনের খুশির জন্য না হয় বারবার মরতাম তবে!
** স্লেটে লেখা নাম, যাবতীয় শ্লোক
গাফফার মাহমুদ
স্লেটে লিখে রাখি শৈশবের নিকুঞ্জ বাবু
পিতৃস্নেহে শিখিয়েছেন যাবতীয় পাঠ
রেইন্ট্রিকাঠের বেঞ্চ, পাশাপাশি বসা
সুরে সুরে মুখস্থ পাঠ অগণন বইয়ে।
‘ওঠো শিশু মুখ ধোও পরো নিজ বেশ
আপন পাঠেতে মন কর হ নিবেষ।’
প্রিয় নিকুঞ্জ বাবু, এখনও পড়ছি বই
নিবিষ্টতায় পাঠ নিই-
যাবতীয় শ্লোক, যৌগিক গণিত সূত্রাবলী।
** সরল গরল
রফিকুজ্জামান রণি
যখন মাটির মতো নিরীহ ছিলাম
আমার বুকের ওপর পা ফেলে ফেলে হেঁটেছে মানুষ
আমার কষ্টের কোনো মূল্য ছিল না তখন
যখন ইটের মতো কিছুটা শক্ত হতে লাগলাম
আমাকে ভীষণ আদর করে দেয়ালে বসালো তারা
আমার কিঞ্চিৎ পদোন্নতি ঘটলো তাতে
যখন লোহার মতো আরও আরও শক্ত হয়ে গেলাম
আমাকে দিয়ে মানুষ মানুষের মাথায় বাড়ি দিতে আরম্ভ করল
সুযোগ পেয়ে, আমিও যে-
এক লাফে পা থেকে মাথায় উঠে গেলাম।
** অনুভব
বিবিকা দেব
আলনায় এলোমেলো কাপড়ের ভাঁজে বন্দী চোখ। আমার দেয়া শার্টের উপর। চমৎকার মানিয়ে ছিল খুব। যখন কাজের জন্য বাহিরে যেতে, শার্টের গন্ধ বিভোর হতাম। তোমার ব্যবহার্য সব জিনিস থেকে মাদকতার ঘ্রাণ। তখন ভাল লাগার অনুভূতিগুলো আরও শিহরিত হতো।
কিন্তু এখন, শার্টে মলিনধুলো জমেছে আর পুরনো হয়েছে আমার মতো। তোমার প্রিয় পারফিউম শেষ হয়েছে কিছুদিন যাবত। নিঃশেষিত আমিও তার সঙ্গে। খালি কৌটোর ন্যায় তুমিহীন আকাশ দেখি।