ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘লিভারপুলের সাফল্য এখানেই থামছে না’

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ২৮ জুন ২০২০

‘লিভারপুলের সাফল্য এখানেই থামছে না’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ক্লাবগুলোর মধ্যে লিভারপুল একটি। শোনা যায়, ১৯৬৩ সালের প্রাক-মৌসুমে তৎকালীন লিভারপুল কোচ বিল শ্যাঙ্কলির হাতে একটি অপ্রকাশিত গানের রেকর্ড ধরিয়ে দিয়েছিলেন জেরি মার্সডেন। লিভারপুলের ছেলে মার্সডেনের তৈরি ব্যান্ড ‘জেরি এ্যান্ড দ্য পেসমেকার্স’ ষাটের দশকে বিখ্যাত ছিল। শ্যাঙ্কলিকে দেয়া সেই গানটিই ছিল ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক এ্যালোন!’ সেই মৌসুম থেকে লিভারপুলকে আর একা হাঁটতে হয়নি। পরের ২৬ বছরে ১৩ বার লীগ জেতে লিভারপুল। শেষ তিনটি কেনি ড্যালগ্লিশের হাত ধরে। তারপর হঠাৎ লাল জার্সির এই দলের দূরত্ব বেড়ে যায় লীগের সঙ্গে। জার্মানির জার্গেন ক্লপ যেন আকাশের চাঁদটা পেড়ে আনলেন। সম্ভব করলেন সালাহ্, মানে, ফিরমিনো, রবার্টসন, আলেকজান্ডার আর্নল্ডরা। যাদের ব্যক্তিগত দক্ষতাকে একসুতোয় গেঁথে ফেলার কাজটাই করেছিলেন ক্লপ। গত কয়েক বছরে লিভারপুলের খেলায় যা টের পাওয়া যাচ্ছিল প্রতি মুহূর্তে। গতি, ট্যাকটিক্স, স্ট্র্যাটেজি, গোল করার দক্ষতা সবকিছুই যেন বড় মসৃণ। লাল রঙের ঝাঁ চকচকে ফেরারি যেন। যে গাড়ি চললে ইঞ্জিনের একটা ‘সিগনেচার’ আওয়াজ কানে আসে। তেমনই সালাহ্-ফিরমিনোদের সোনালি দৌড়ের সময় শোনা যেতে শুরু করেছিল ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক এ্যালোন।’ পরপর দুই বছর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে জায়গা করে নেয় লিভারপুল। প্রথমবার রানার্স হয় তারা। তবে পরের বার আর সুযোগ হাতছাড়া হতে দেননি জার্গেন ক্লপের দল। গত বছর এই দলই বিশ্ব ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় প্রথমবারের জন্য। অল্পের জন্য গত মৌসুমে খেতাব হাতছাড়া হয় প্রিমিয়ার লীগের। পেপ গার্ডিওলার দল বৃহস্পতিবার রাতে চেলসির কাছে ২-১ গোলে হারলেই এবার শিরোপা নিশ্চিত করে নেয় অলরেডরা। আর সেই ম্যাচ শেষ হতেই ফর্মবি হল গল্ফ রিসর্ট এ্যান্ড স্পা’তে উৎসব শুরু করে দেন সালাহ-ফিরমিনো-মানেরা। ক্লপ নাচেন অদ্ভুত কায়দায়। স্টিভেন জেরার্ড কৃতিত্ব দিয়েছেন ক্লপকে। গার্সিয়া-তোরেস-সুয়ারেজরাও অবিশ্বাস্য সাফল্যে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাস্কেটবল তারকা লেব্রন জেমস, বিটলসের রিঙ্গো স্টার, হলিউড অভিনেতা স্যামুয়েল এল জ্যাকসন উচ্ছ্বসিত প্রিয় দলের লীগ শিরোপা জয়ে। ক্লপ তো আবেগে কেঁদেই ফেলেন। তিন দশক পর জেতা এই শিরোপা উৎসর্গ করেন ড্যালগ্লিশ ও জেরার্ডকে। বললেন, ‘৩০ বছরের অপেক্ষার পর এই খেতাব ওদের জন্য।’ ড্যালগ্লিশের আশীর্বাদ, ‘এই লিভারপুল দলের সাফল্য এখানেই থামছে না।’ ড্যালগ্লিশের কথামতো হয়তো আর সত্যিই একা হাঁটতে হবে না। জার্গেন ক্লপের অনুভূতি, ‘অনেক ট্রফি জিতলাম, কিন্তু এটা স্পেশ্যাল। কারণ ইংল্যান্ড সেরা হওয়ার জন্য ক্লাব সদস্য সমর্থকদের এত বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এই শিরোপা আমি ওদেরই উৎসর্গ করছি।’ ৩০ বছর পর লিভারপুলের ইপিএল জয়ের কা-ারি। বৃহস্পতিবার রাতে চেলসি যখন ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে হারিয়ে লিভারপুলের চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে দিল তখন লিভারপুল কোচ তার দলবল নিয়ে একটি হোটেলে ছিলেন। শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পরই যখন ৫৩ বছরের জার্মান কোচকে একটি টিভি ক্যামেরা ধরে তখন তিনি কাঁদছেন। এই কান্না আনন্দের। এই কান্না অন্যরকম প্রাপ্তির।
×