ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রাণে ভাটা নয়

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২৫ জুন ২০২০

ত্রাণে ভাটা নয়

করোনাভাইরাসের বহুল সংক্রমণে জনজীবন বিপর্যস্ত, দিশেহারা। অবরুদ্ধতার কঠিন জালে আটকানো ছাড়া সংক্রমণটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অন্য কোন প্রতিরোধ এখন পর্যন্ত অজানা। সামাজিক দূরত্ব থেকে ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতা আমলে নিতে গিয়ে মানুষের মিলনগ্রন্থিতে তৈরি হয়েছে অনাকাক্সিক্ষত স্থবিরতা। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিত্য খেটেখাওয়া অতি সাধারণ মানুষ। তাদের প্রতিদিনের রুজি-রোজগারেও ভর করেছে হরেক রকম বিপন্নতা। স্বাস্থ্যবিধিকে অনুসরণ করতে গিয়ে যে ব্যবধানের প্রাচীর গড়া হয়েছে সেখানে ব্যবসা, বাণিজ্য, আয়, ব্যয় সবই যেন এক অজানা হুমকির মুখে। করোনাভাইরাসের সর্বব্যাপী সংক্রমণে যে মাত্রায় স্বাস্থ্য আর প্রাণঝুঁকি, সেখানে আরও প্রবলভাবে চেপে বসেছে হতদরিদ্র মানুষের প্রাত্যহিক কর্মযোগ। কর্মক্ষম মানুষের ঘরে বসে থাকা জীবন ও জীবিকায় যে নেতিবাচক প্রভাব, সেখানে প্রতিদিনের খাদ্য সংস্থানও এক অনিশ্চয়তার আবর্তে। কর্মহীন মানুষের আয়ের ঘাটতিতে নিত্য চাহিদা মেটানোও এক অনাবশ্যক দুর্যোগ। সঙ্গত কারণেই প্রয়োজন পড়েছে অভাবী মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের আবশ্যকীয় উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ত্রাণসামগ্রী মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় প্রণোদনা, নিত্য পণ্য অসহায় মানুষের হাতের নাগালে চলে যাওয়াই শুধু নয়, ন্যায্য মূল্যে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করা ছাড়াও ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার সুযোগ করে দেয়া হয়। এমন কার্যক্রম অসহায় ও দুস্থ মানুষের মধ্যে অন্তত ছয় মাস পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্তও সরকারপ্রধানের কাছ থেকেই আসে। শুরু থেকেই সরকারী বিতরণে বরাদ্দে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এলে এর প্রতিকারে আইনী ব্যবস্থাও নেয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘায়িত হওয়ায় খেটেখাওয়া মানুষের নিত্য খাদ্য পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। দুর্যোগের কঠিন সময় পার করতে গিয়ে পুরো ব্যবস্থাপনায় আসে এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বহুল সংক্রমণে নাজেহাল নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ। কর্মহীনের সংখ্যা বাড়ছে, অনেকেই চাকরি হারাচ্ছে, কিছু মানুষের বেতন কমে যাওয়ার চিত্রও আছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ ও জটিল। সমাজের বিত্তবান শ্রেণী এবং জনপ্রতিনিধিরা নিজ উদ্যোগেই ত্রাণসামগ্রী বিতরণকে এক ধরনের দায়বদ্ধতা হিসেবে বিবেচনায় এনেছেন। অসহায় মানুষের ঘরে তাদের প্রয়োজনীয় নিত্য পণ্য পৌঁছেও গেছে। সাধারণ ছুটি বলবত থাকা অবস্থায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ চালু থাকলেও তা প্রত্যাহার করে সবকিছু খুলে দেয়ার পর এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। বলা হচ্ছে সরকারী বরাদ্দ শেষ। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কেউ আর এখন শামিল হচ্ছে না। তবে সবাইকে একযোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া এই মুহূর্তে সব থেকে বেশি জরুরী। কারণ করোনাকাল যত দীর্ঘ হচ্ছে, খেটেখাওয়া মানুষের নিত্য সঙ্কট ততই দানা বাঁধছে। সে দুরবস্থা মোকাবেলায় ত্রাণসামগ্রী জোরদার করা এখন সময়ের দাবি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী ছয় মাসের সময়সীমা এখনও পার হয়নি। কিন্তু করোনা তার সংক্রমণ অবস্থানকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে। সঙ্গত কারণেই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ নিয়ে নতুন কর্মসূচী এবং উদ্যোগ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
×