ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আমফানে চুয়াডাঙ্গার আম চাষীদের প্রায় ৩২ কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২৮ মে ২০২০

আমফানে চুয়াডাঙ্গার আম চাষীদের প্রায় ৩২ কোটি টাকার ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা ॥ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাংলাদেশে কার্যত যে লকডাউন চলছে, এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কাল বৈশাখী ঝড় আমফানের কারনেও বাগান মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরপরও সময় মতো সব আম বিক্রি করতে পারবেন কি না সেটা নিয়েও তারা সংশয়ে আছেন। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলাতে ১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিলো। চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে ৩০ হেক্টর জমিতে আমের নতুন বাগান হয়েছে। এ সব বাগান থেকে ফলন হবে ২৯ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন আম। পাইকারী প্রতি মন ১ হাজার ২০০ টাকা হিসাবে আম বিক্রি হলে হবে ৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকায়। মূলত আম চাষ লাভজনক হওয়ায় জেলার চাষীরা আম বাগান তৈরি করার দিকে ঝুঁকছেন। তবে সাম্প্রতিক ঝড়ে ১০ হাজার ৫৮৪ মেট্টিকটন আমের ক্ষতি হয়েছে। যার মূল্য ৩১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। চুয়াডাঙ্গার আম বর্গাচাষী জেলা আম ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানান, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মাঠে ২০১২ সালে ৪০ লাখ টাকায় ৭০ বিঘা জমি বর্গা নিই। এরপর ১০ হাজার আমের চারা রোপনসহ বাগান তৈরী করতে আরো ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়। এখনো খরচের সিংহভাগই উঠে আসেনি। এবার ফলন ভাল হয়েছে। করোনার কারনে বাজারজাত নিয়ে দু:চিন্তায় আছি। তবে আমাদের এলাকার হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই, আম রুপালিসহ অনেক ভাল ভাল জাতের আম ফলে। এ সব আম খুবই সুস্বাদু, দেশ বিদেশে এর খ্যাতি আছে। তবে পর পর দুটি ঝড়ে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ মৌসুমে আম বিক্রি করে সারা বছরের বাগান পরিচর্যা ও শ্রমিকের মজুরি উঠে আসবে না । আম বর্গাচাষী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত আম জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চিটাগাং,বরিশাল, সিলেটসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন মোকামে রপ্তানী করে থাকি। কিন্তু করোনার কারনে আমাদের এই আম গুলো বাজারজাত করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আম বর্গাচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন আগে বয়ে যাওয়া আমফান ও কাল বৈশাখী ঝড়ে প্রচুর আম, গাছ থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছি। অবশিষ্ট যে আম গুলো গাছে আছে, এর সঠিক বাজারজাতকরণ দরকার। এর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি। আমবাগান শ্রমিক ফরজুল খাঁ জানান, আম গাছে মুকুল আসার আগ থেকে ১৮-২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করি। আমাদের প্রতিমাসে ৯ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়। আম গাছ থেকে পাড়ার সময় আরো অতিরিক্ত শ্রমিক নেয়া হয় দিন হাজিরাই। তাদেরকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী হাসান বলেন,চুয়াডাঙ্গার হিমসাগর আম বিখ্যাত। আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা জাতে সঠিক দামে আম বিক্রি করতে পারে এ জন্য জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আমরা এক সঙ্গে কাজ করছি। এ জেলা থেকে বিভিন্ন মোকামে আম পাঠাতে বা বিক্রি করতে কোন ধরনের সমস্যা জাতে না হয় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। বিভিন্ন মোকাম থেকে যে সকল ব্যবসায়ীরা চুয়াডাঙ্গায় আম কিনতে আসবেন তাদের নির্বিঘেœ আসা, থাকা, খাওয়া এবং নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব কিছুর দেখভাল করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। তবে সম্প্রতি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ আমসহ সকল প্রান্তিক চাষীকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। এ জেলার হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাহিদা রয়েছে দেশে বিদেশে। করোনার কারনে আম বিক্রি নিয়ে চাষীরা দু:চিন্তা করলেও ন্যায্য মূল্য ও মোকামে পাঠানোর ব্যাপারে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ দাবীসহ ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের কৃষি প্রণোদনা দেয়ার প্রত্যাশা করছেন এখানকার আম চাষীরা।
×