ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

পুলিশ লাইন্স একাডেমির বাংলা প্রশ্নেও ভুলের ছড়াছড়ি: নবম শ্রেণির প্রশ্নপত্রে ১০টি ভুল

রিপন ইসলাম শেখ, নীলফামারী

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩৭, ১২ জুলাই ২০২৫

পুলিশ লাইন্স একাডেমির বাংলা প্রশ্নেও ভুলের ছড়াছড়ি: নবম শ্রেণির প্রশ্নপত্রে ১০টি ভুল

নীলফামারীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুলিশ লাইন্স একাডেমিতে নবম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্রে অন্তত ১০টি ভুল ধরা পড়েছে। এর আগে ইংরেজি প্রশ্নপত্রেও এমন ভুল দেখা গিয়েছিল। এই ঘটনা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

প্রশ্নপত্রে ধরা পড়া ভুলগুলোর মধ্যে রয়েছে বানান, ব্যাকরণ, বিরামচিহ্ন এবং নির্দেশনার অস্পষ্টতা। চিহ্নিত ভুলগুলোর কয়েকটি হলো: ‘শ্রেণী’, ‘কর্মধারায়’, ‘কোটি(কোনটি)’, ‘ব্যঞ্জনবর্ণের’, ‘রূপতত্ত্বে’, ‘বর্ণ’, ‘কষ্ঠ বর্ণ’, ‘বিশ্লেষণ’, ‘ব্যসবাক্য’, ‘উচ্চারিত’ এবং ‘উদাহরণ’। এছাড়া কিছু প্রশ্নে দ্বৈত নির্দেশনা, ভাঙা বাক্য এবং অপ্রাসঙ্গিক সাহিত্যিক উদ্ধৃতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলা শিক্ষক জানান, ভুলের ধরন দেখে মনে হয়েছে প্রশ্নটি প্রাথমিকভাবে কেউ খসড়া করেই চূড়ান্ত করেছে, যাচাই হয়নি।

অভিভাবকদের মধ্যে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, একই প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ও বাংলায় ধারাবাহিকভাবে ভুল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হচ্ছে, এটা কি কাকতালীয়? অভিভাবক আশরাফ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা প্রতি মাসে সন্তানদের জন্য ৭০০-৮৫০ টাকা বেতন দিচ্ছি। অথচ শিক্ষার মান তো দূরের কথা, প্রশ্ন তৈরির সামান্য মনোযোগও নেই।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ লাইন্স একাডেমির অধ্যক্ষ তফায়েল আহম্মেদ বলেন, “প্রশ্নপত্রটি আমি দেখেছি, তাতে ভুল রয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। যিনি প্রশ্নটি তৈরি করেছিলেন, তাকে শোকজ করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন তৈরিতে সরাসরি সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের তেমন ভুল ছিল না, মূলত টাইপিংয়ের সময় কিছু ভুল হয়েছে, যা যাচাই না করেই ছাপানো হয়েছে।”

পরীক্ষায় অংশগ্রহণসংক্রান্ত একটি পোস্টে শুরুতে ৪৮ জন শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে ‘১০০% পাস’ দাবি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অনেকে জানানোয় সেটি সংশোধন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে, ৫২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল, যার মধ্যে ৪ জন ফেল করেছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে দেখছি। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে।”

শিক্ষানুরাগীরা মনে করছেন, একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা জেলাজুড়ে শিক্ষার মান নিয়ে শঙ্কা তৈরি করেছে। তাদের মতে, যথাযথ তদারকি ও জবাবদিহিতা ছাড়া এসব ভুলের পুনরাবৃত্তি আটকানো সম্ভব নয়।

এছাড়াও, বিদ্যালয়টি থেকে ৫২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও পাস করেছে ৪৮ জন। অথচ বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে ৪৮ জন শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ১০০ শতাংশ পাশের হার দেখানো হয়েছে, যা তথ্যের বিকৃতি। গোপন সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনারই ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনাগুলো পুলিশ লাইন্স একাডেমির শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই তুলে ধরছে, যা দ্রুত সমাধানের দাবি রাখে।

মিমিয়া

×