ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থবির সাংস্কৃতিক বলয়

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ৭ এপ্রিল ২০২০

স্থবির সাংস্কৃতিক বলয়

করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সারাদেশ যেমন অবরুদ্ধতার কঠিন বেড়াজালে তেমনি বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনেও এক অচলায়তন, অচলাবস্থায়। সংস্কৃতি মানুষের প্রতিদিনের শক্তি, কর্মোদ্দীপনা, অস্তিত্ব সঙ্কটে সচল পথনির্দেশনা সর্বোপরি ঐতিহ্য রক্ষার সৃজনদ্যোতনা। সৃষ্টিশীল জগতও মনন চেতনার সমৃদ্ধ বলয় মানুষকে তার আত্মপরিচয়ের নিশানা দেয়। এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও উৎসাহ যোগায়। নিত্য যাপিত জীবনকে আলোর ভুবনে ভরিয়েও দেয়। দেশের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র আজ অবরুদ্ধতার চরম দুর্বিপাকে। সিনেমা, নাটক, নাচ, গান, কারুশিল্পসহ সংস্কৃতি চর্চার হরেক রকম সূচক আজ থমকে গেছে। করোনাভাইরাসের সর্বগ্রাসী সংক্রমণ কালো ছায়া ফেলেছে মানুষের মননচর্চা আর সৃজন শিল্পে। এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আক্রমণ আর প্রাণ সংশয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। সংস্কৃতি মানেই সর্বমানুষের মিলন সাধনা। যৌথ শিল্পচর্চায় নান্দনিক অঙ্গন পরিশীলিত হয়, মানুষের মানবিকবোধ জাগ্রত করে, আদর্শ নিষ্ঠতায় জাতির ক্রান্তি পার করতে সময়োপযোগী রসদও যোগায়। যেখানে করোনা সর্বমানুষের মিলনযজ্ঞে তার সর্বগ্রাসী কালো থাবা ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেখানে সহজ মিলনের পথ রুদ্ধ হবে সেটাই স্বাভাবিক। সংস্কৃতিসেবী ও কর্মীরা সব সময় সাধারণ মানুষের মঙ্গল আর জয়গানে তাদের শিল্পীত জীবন উৎসর্গিত করে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিনোদন জগতটি তেমন অনিশ্চয়তার কঠিন আবর্তে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কোন ধরনের মিলন দ্যোতনাকে পরিপূর্ণ-পরিহার করা এ মুর্হূতে অত্যন্ত জরুরী। তবে বিনোদনের অনেক উপায় ঘরে বসেও উপভোগ করা যায়। যেমন বইয়ের মতো সর্বক্ষণিক সঙ্গীর কোন তুলনা নেই। তাই নিবেদিত পাঠকের কাছে এই তো সময় পছন্দের লেখকের রচনা পড়ে নেয়ার। তথ্য-প্রযুক্তির সমৃদ্ধ যুগে অনলাইনও এখন বিনোদনের হরেক রকম আয়োজন করে। প্রতিযোগিতামূলক গান, নাচের উৎসব মুখরিত অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখে। অনলাইনের বিভিন্ন চ্যানেলে অনেক জনপ্রিয় সিনেমাও দেখা যায়। যেসব দেখার অবসর কর্মজীবী মানুষের আদৌ থাকে না। টেলিফিল্ম, জীবন ঘনিষ্ঠ নাটক সঙ্গে কোন জননন্দিত শিল্পীর একক সঙ্গীতানুষ্ঠান দর্শক-শ্রোতার বিনোদনের খোরাক যোগাতে মূল ভূমিকা পালন করে। করোনাভাইরাসের এই দুর্দমনীয় আক্রমণে বিভিন্ন চ্যানেল এখন ঘরবন্দী মানুষের আনন্দযোগের হরেক রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। তবে মনে রাখা দরকার এসব চ্যানেলের কলাকুশলীরাও ঘরে আটকে আছেন। আগের নান্দনিক অনুষ্ঠানমালা, যা মানুষ এখন ভুলতে বসেছে সে সব দর্শক মাতানো শৈল্পিক নিবেদনও সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সামনে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য আর একটি মহৎ ও বিরাট আয়োজন। বাঙালীর ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির মহোৎসব পহেলা বৈশাখ, যা দেশব্যাপী সম্প্রসারিক এক আনন্দঘন মিলনমেলা। সেটাও এবার আগের মতো জনসমাবেশকে এড়িয়ে যথাসম্ভব ঐতিহ্য রক্ষার পর্বটি টিভির মাধ্যমে সম্প্রচারিত ও সম্প্রসারণ করা হবে একযোগে সারাদেশে। সে ব্যাপারেও টিভি চ্যানেলের স্বত্বাধিকারীরা একমত পোষণ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উৎসবপ্রিয় জাতি আমরা। আয়োজনে, আড়ম্বরে, মিলনযজ্ঞে আনন্দ উদযাপন আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। এবার সেখান থেকেও আমাদের সরে আসতে হবে। কারণ এ মুহূর্তে করোনা ঠেকানো ছাড়া আমাদের অন্য কোন প্রত্যাশা কিংবা আকাক্সক্ষা নেই। ঘরে বসে যেটুকু বিনোদন হবে, সেটাই আমাদের পরম পাওয়া।
×